নিউজ ডেস্ক: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আমলের আদলে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহর সাহায্য আমরা পাব ইনশাআল্লাহ। কারণ আমরা ন্যায়ের পক্ষে, জনগণের অধিকারের পক্ষে আছি। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্নটুকু থাকবে, ততক্ষণ আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় ফেনী শহরের কিং অব কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, কোনো ফ্যাসিবাদ বাংলার জমিনে থাকতে পারবে না। লড়াই করেছি অধিকারের জন্য, যা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনের জন্য কিছু জরুরি ও মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা পরিষ্কার বলেছি। এ সংস্কারের পথে বাঁধা দেওয়া কোনো দলের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা হতে পারে না। সংস্কার কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা সবাইকে অনুরোধ করব। মৌলিক সংস্কার শেষ হলে যার যার রাজনীতি সকলে করতে পারবেন। দুর্গন্ধযুক্ত অতীতের প্রথা পরিষ্কারের আগে আবারও যদি নির্বাচন হয়, সেটি হবে নির্বাচনকে গণহত্যা করার সামিল।
২৪-এর শহীদদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের সঙ্গে আমরা বেইমানি করব না, কাউকে বেইমানি করতে দেওয়া হবে না। এ সন্তানদের পবিত্র রক্তের মূল্য, তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রস্তুত। আমরা বলেছি আগামী নির্বাচনে কোনো ধরনের প্রশাসনিক ক্যু-শব্দ শুনতে চাই না। তাই যদি হবে এতো এতো মানুষ জীবন দিয়েছে কেন?
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমাদেরকে উন্নয়নের মহাসড়কের কথা বলতো। কিন্তু আমরা সেই উন্নয়নের মহাসড়ক দেখিনি। আমরা তাদের ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচারের উন্নয়ন দেখেছি, রূপপুরের ৭২ হাজার টাকার বালিশ দেখেছি। বিরোধী দল ও মতের ওপর তাদের দানবীয় নির্যাতন ও বেপরোয়া তাণ্ডব দেখেছি। তারা জামায়াতের এক থেকে এগারো নম্বর নেতা পর্যন্ত সিরিয়ালে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। রিমোট কন্ট্রোলের সেই রায় দিয়ে তারা শুধু আমাদের খুন করেনি, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাহেলি যুগ থেকে এ পর্যন্ত সব সময় যুবকদের হাতেই সমাজ পরিবর্তন হয়েছে। যুবকরাই পরিবর্তনের নিয়ামক। জাতি হিসেবে আমরা আবু সাঈদদের কাছে ঋণী, তাদের বন্ধুদের কাছে ঋণী। তারা জীবন দিয়ে ৫ আগস্টের পরে আমাদের জাতিকে মুক্ত করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে যখন কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন না- তখন আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেছি। দীর্ঘ ১৫ দিনের এ ধরনের দায়িত্ব পালনের পর আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরে ফিরেছি। যখন থানাগুলোতে কাজের কোনো পরিবেশ ছিল না, তখন আমরা ২৩২টি থানায় যাবতীয় সরঞ্জাম দিয়ে কাজ শুরু করে পুলিশের পাশে ছিলাম। তাই তাদের বলব, আপনারা কোনো রাজনৈতিক দলের পুলিশ হবেন না। সাধারণ নাগরিকদের পুলিশ হন।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি এটিএম মাসুম প্রমুখ।
এ সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুরে একই স্থানে রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির।