নিউজ ডেস্ক: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হতে পারে আগস্টে। এসব মামলায় ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলাও রয়েছে। বাকি তিনটির একটি রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর মামলা। অন্য মামলাটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা।
আগস্টে দুটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। আর অপর দুটি মামলা চার্জ গঠন পর্যায়ে আছে। বিচারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এ দুটি মামলারও চার্জ গঠন হতে পারে আগস্টে। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জন আসামি রয়েছেন। মামলার ফরমাল চার্জে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নির্দেশদাতা হিসাবে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে।
প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-খুন-নির্যাতনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ এসেছে ৪৩০টি। এখন পর্যন্ত যে ২৭টি মামলা হয়েছে, এর মধ্যে ২৩টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। আর চারটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। এখনো পলাতক ১৩২ জন।
জানতে চাইলে প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ বুধবার বলেন, ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২৭টি মামলা হয়েছে, এর মধ্যে ২৩টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। চারটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে। এ চারটির মধ্যে নির্দেশদাতা হিসাবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি এবং রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যাসহ দুটি মামলার ওপেনিং স্টেটমেন্ট ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য রেখেছেন আদালত। আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানো এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলা দুটিও আগস্টে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতে পারে। তবে সবকিছু ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিচার শুরুর আদেশ : গত ১০ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলায় অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তাদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী বা ‘অ্যাপ্রুভার’ হয়েছেন। তিন আসামির মধ্যে একমাত্র তিনিই কারাগারে আটক আছেন। বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন। প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিক বিবৃতি (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) ৩ আগস্ট এবং মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ৪ আগস্ট দিন রেখেছেন আদালত। ট্রাইব্যুনালে অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে ১২ মে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেখানে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৪ জুলাই এ মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে ১০ আগস্ট এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং ১১ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।
আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানো : আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ পলাতক আট আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৬ জুলাই বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ২৮ জুলাই ধার্য করেছেন। এর আগে ২৪ জুন আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই ১৬ আসামির ৮ জন বর্তমানে কারাগারে। ২ জুলাই এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৮ জুলাই : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে ২৮ জুলাই। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার শুনানির জন্য এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এ মামলায় ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ আসামি পলাতক।