নিউজ ডেস্ক: দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে আবারও দেখা মিলছে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজসিক সৌন্দর্য। যা দেখতে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। কয়েকদিন ধরে হেমন্তে আবহাওয়া পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত না থাকায় দেখা যাচ্ছিলো না কাঞ্চনজঙ্ঘার। হঠাৎ করেই গত দুদিন থেকে আবারও দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) পঞ্চগড়ের করতোয়া সেতুসহ বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকা, বাংলাবান্ধা, শালবাহান ও ভজনপুরসহ জেলা শহরের বিভিন্ন স্পটে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কেউ উপভোগ করছেন খালি চোখে, কেউ আবার মুঠোফোন ও ক্যামেরায় ধরে রাখছেন সেই অনন্য মুহূর্ত।
স্থানীয়রা জানায়, ভোরের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘা কখনও নেয় কালচে-বেগুনি রূপ, কখনও আবার হয় শুভ্র সাদা। দুপুরে পাহাড় চূড়ায় পড়ে সূর্যের আলো- হয়ে ওঠে সোনালি, আর বিকেলে কখনও লাল, কখনও বেগুনি আভায় রাঙিয়ে তোলে পুরো দিগন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ জাকারিয়া এসেছেন পঞ্চগড়ে। তার ইচ্ছে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার। তিনি জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছি এর আগেও, কিন্তু যতবার দেখি ততোবার এর সৌন্দর্য আমাকে বিমোহিত করে। সরাসরি এভাবে দেখা অসাধারণ মুহূর্ত। ভোরে রঙ পাল্টানোর দৃশ্যটা চোখে দেখলে বোঝা যায় কেন এতো মানুষ এখানে আসেন।
রংপুর থেকে আসা সৌমিক জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজসিক সৌন্দর্য উপভোগ করা কপালের ব্যাপার তিন দফায় ঘুরে এবার দেখতে পেলাম। অনেকেই বলছেন, গত দু'সপ্তাহে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরলেও আজ হঠাৎ করে ঘুরতে এসে ভাগ্য সহায় হয়েছে।
পর্যটকরা বলছেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসে আবাসনসহ অন্যান্ন সুযোগ সুবিধা তেমন নেই এখানে। সরকারিভাবে পর্যটন মোটেল গড়ে তোলা দরকার। স্থানীয়রা বলছেন, তেঁতুলিয়ায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠলে এখানকার সমতলের চা, ভূগর্ভস্থ্য পাথরের সাথে পর্যটন খাত দেশের অর্থ বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা, আবাসন নিশ্চয়তা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে অনলাইন অ্যাপ 'হোটেলস ডট জিওভি ডট বিডি'। অ্যাপের মাধ্যমে আগে থেকেই থাকা-খাওয়ার বুকিং করা যাবে, পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য আবাসনের তথ্যও পাওয়া যাবে।’
তিনি আরও জানান, প্রতিবছর নভেম্বর-জানুয়ারি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকের চাপ বাড়ে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সেবা সহজ করতে আমরা অ্যাপটি চালু করেছি। পর্যটন অঞ্চলের পরিবেশও আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকেই পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। কিন্তু এ বছর অক্টোবর মাসে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বড় পরিসরে দেখা মেলেনি। নভেম্বরের শুরু থেকেই দুদিনের জন্য দেখা গেলেও আবহাওয়া পরিষ্কার না থাকায় আবারও লুকিয়ে যায়। তবে সোমবার আবারও সাদা-রূপালি সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে এ বিশাল পর্বতশৃঙ্গ।