মো. ফজলে রাব্বী: রংপুর বিভাগের পালিচড়া ইউনিয়নের পাইকারি হাট (পালিচড়া হাট) থেকে শহরের খুচরা বাজারের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। অথচ এই দূরত্ব অতিক্রম করলেই সবজির দাম কেজিতে বেড়ে যাচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ টাকা। এতে কৃষকরা ঠকলেও পকেট ভারী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের। বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খেয়াল-খুশিমতো সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম রাখছেন বিভাগীয় শহরে বাজারের আসাধু ব্যাবসায়ীরা।মাত্র ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি বাজারে বিভিন্ন ধরনের দামে পণ্য বিক্রি চলছে। বাজারভেদে পাইকারি ও খুচরায় ব্যবধান দাঁড়ায় তিন থেকে চারগুণ। সে তুলনায় প্রান্তিক পর্যায়ে দাম অনেক কম।
পণ্যের দাম বেশি হওয়ার পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষছেন পরিবহন ভাড়াকে। পাশাপাশি পাইকারি বাজারের শ্রমিক খরচ, বিভিন্ন চাঁদা, হাট কমিটির খাজনা, বোর্ড ভাড়া (পণ্য সংগ্রহের পর যেখানে স্তূপ করে রাখা হয়) মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে জানা যায়।
পালিচড়া ইউনিয়ন থেকে লালবাগ বাজারে সবজি নিয়ে আসেন সায়েম হোসেন এবং লুৎফর আলী নামে দুই বিক্রেতা। গ্রাম থেকে শাকসবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের কাঁচামাল সামগ্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসে এবং বাজারে বিক্রি করেন । অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও তারা স্থানীয় বাজার থেকে এনেছেন পুঁইশাক, লাল শাক,লাউ শাক, কলমি শাক , বরবটি, ঢেঁড়স, লাউ শাক,ডাঙ্গাসহ কয়েক ধরনের শাকসবজি। এছাড়াও রয়েছে আদা, রসুন, আলু, আরও কচুঁশাক।
পাইকারি বাজারে লালশাক, পাটশাক ও ছোট সাদা শাক প্রতি আঁটি ৪ থেকে ৫ টাকা, পুঁইশাক প্রতি আঁটি ৫ থেকে ৭, সাদা ডাটা ৫ থেকে ৭, কলমি শাক ৪ থেকে ৫, কচু শাক ৭থেকে ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে । বাজারে প্রতি কেজি পাইকারি চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ১৫ , কচুরলতি ১৫ থেকে ২০, দুই কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ ও বড় আকৃতির মিষ্টি কুমড়া ১১ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।
রংপুর লালবাগ বাজারে খুচরা দরে প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৩০ , বরবটি ৩০, দেশি শসা ৭০, ঢেঁড়স ২৫ এবং করলা বিক্রি করেছেন ৭০থেকে ৮০, মিষ্টি কুমড়া ২৫, কচুর লতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। প্রতিটি লাউ ও জালি বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও লালশাক, পাট শাক ও ছোট সাদা শাক প্রতি আঁটি ১৫ থেকে ২০, পুই শাক ২০ থেকে ২৫, কলমি শাক ১৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
লালবাগ বাজারের কাছাকাছি চকবাজার ও মডার্ন সবজি বাজারে দামের ব্যাপক ভিন্নতা। এই তিনটি বাজারের বিক্রেতারা অনেক সময় লালবাগ বাজার থেকেই পাইকারি দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রি করেন।শাক-সবজি দামের ব্যবধান পাইকারি বিক্রি থেকে খুচরায় তিন থেকে চারগুণ দাম বেশি।
পালিচড়া ইউনিয়নের খুচরা ব্যবসায়ী সায়েম হোসেন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে পণ্যের দাম অনেক কম। কিন্তু বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন বাজারে এলেই দাম অনেক বেড়ে যায়। মূলত পাইকারের কাছ থেকে বের হলেই দাম বেড়ে যায় বহুগুণে। অথচ আমাদের স্থানীয় চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন , নিয়মিত বাজার মনিটরিং না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন এবং অতি চড়া দামে সবকিছু বিক্রি করে থাকেন । এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে দাম কমে আসবে কয়েকগুণে।
চকবাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘আমাদের লাভ বেশি হয় না, বিভিন্ন খরচে সব চলে যায়। দোকান থেকেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসবে টাকা দেয়া লাগে। তাছাড়া কাঁচাবাজারের দাম আজ যেটা কম কাল সেটা বেশি হতে পারে। কাঁচা বাজারের দাম সব সময় উঠানামা করে।