স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারীতে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়ে গেছে একটি পরিত্যাক্ত মুরগির খামারের পরিত্যাক্ত আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি। শুক্রবার(৮ আগষ্ট) দুপুরে জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের দালালের বাজার গ্রামে হামিদা এগ্রো লিমিটেড নামের ওই খামারে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ১০ লক্ষাধিক টাকা বলে স্থানীয়রা জানায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ২০১২ সালে ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা জনৈক হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যাক্তি সেখানে প্রায় ১০ একর জমি কিনে ওই খামারটি স্থাপন করেন। ওই খামারে লেয়ার মুরগি ও ডিম উৎপাদন হতো। ২০১৯ সালে খামারটি হঠাৎ বন্ধ রেখে খামার মালিক গা ঢাকা দেন। তখন থেকে খামারটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স জেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. খুরশীদ আলম বলেন, বেলা সোয়া ১১টার দিকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হই। এতে আনুমানিক ক্ষায়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অগ্নিকান্ডের কারণ উদঘাটন করা যায়নি। প্রায় ৫-৬ বছর যাবত কারখানাটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে বিদ্যুতের সংযোগও নেই। তাই তদন্ত না করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে ওই গ্রামের আমিনুর রহমান বলেন, শুক্রবার দুপুরে কারখানার একটি সেডের ভেতর আগুন লাগে। স্থানীয়রা দমকল বাহিনীকে খবর দিলে দমকল বাহিনী এসে প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। তিনি বলেন, কারখানার ভেতর কেউ যাওয়া আসা করে না। ভেতরে বিদ্যুতের সংযোগও নেই। আগুনটা কি ভাবে লেগেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাছাড়া এই কারখানা দেখা শোনা করার কোনো লোকও এখানে থাকেন না।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, হাবিবুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে এখানে প্রায় ১০ একর জমি কিনে প্রথমে এখানে সোয়েটার(পোশাক) কারখানা করার কথা থাকলেও তিনি তা না করে মুরগির খামার করেন। প্রতিদিন এখানে এলাকার প্রায় দুইশত লোক কাজ করতেন। এখানকার মুরগি ও ডিম স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করা হতো। ২০১৯ সালে তিনি (হাবিবুর রহমান) কারখানাটি হঠাৎ রাতারাতি বন্ধ রেখে গা ঢাকা দেন। পরে আমরা জেনেছি তিনি দেশের বাহিরে পালিয়ে গেছেন। যারা সেখানে কাজ করতো তাদের দুই-তিন মাসের বেতন পরিশোধ করেনি তারা।
অপর বাসিন্দা বাবলু ইসলাম বলেন, ঢাকার একটি ব্যাংকের (ইসলামী ব্যাংক) শাখায় দায়বদ্ধ ছিল কারখানাটি। আমরা শুনেছি এই কারখানার নামে ৬১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কারখানা মালিক দেশের বাহিরে পালিয়েছেন। কারখানা বন্ধের পর যে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ওই ব্যাংকেরও কাউকে এখানে দেখা যায় না।
চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুম রেজা বলেন, কারখানায় কোনো বিদ্যুতের সংযোগ নেই। সেখানে কেউ থাকেনও না। ওই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। কিভাবে আগুন লাগছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিতে পারে।
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ বলেন, একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারে অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। অগ্নিকান্ডের কারণ জানা যায়নি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।