নিউজ ডেস্ক: গাজীপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে দায়িত্ব পালনের সময় আরেকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার এ ঘটনায় উঠে এসেছে কয়েকজন চিহ্নিত অপরাধীর নাম কেটু মিজান, শাহজাহান, বুলেট, সুজন ও স্বাধীন; যারা স্থানীয়ভাবে অপরাধী হিসেবে পরিচিত হলেও বরাবরই থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু কারা এরা? এ প্রশ্নই এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রকাশ্যে বাদশা নামে একজনকে কোপানোর ভিডিও ধারন করায় হত্যা করা হয় তুহিনকে। জানা যায়, ঘটনায় সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে কেটু মিজান ও শাহজাহান। ঘটনার সময় দুজনকেই অস্ত্র হাতে দেখা যায়। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে যাদের নামে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও ঘটনায় বুলেট ও সুজন নামে আরও দুজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। উঠে আসে জালাল নামে আরও একজনের নাম। বাসন থানা পুলিশ বলছে, মোট ৫ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো সময় তাদেরকে ধরা হবে।
স্থানীয়রা জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা একাধিকবার ছিনতাইয়ে অভিযোগে গ্রেফতার হলেও বেশিরভাগ সময়েই জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাদের নেতৃত্বে চলে ছিনতাই পরিকল্পনা। হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজন মিজান। স্থানীয়ভাবে নামে পরিচিত। অতীতে চৌরাস্তা এলাকাতেই একাধিক ছিনতাইয়ের সময় আহত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হত্যার ঘটনায় জড়িত আরেকজন হলেন জালাল। তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বেশ কিছু জিডি রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্বাধীন ছিনতাই চক্রের নতুন সদস্য হলেও আগ্রাসী মনোভাবের জন্য তাকে ব্যবহার করা হয় হামলার সময়। তুহিন হত্যার সময় চাপাতি নিয়ে সে-ই প্রথম আঘাত করে বলে জানিয়েছে এক প্রত্যক্ষদর্শী।
জানা যায়, বিকেলে চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভকে কেন্দ্র করে রাতে তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন তথ্য উঠে এসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তবে তাকে হত্যার পিছনে চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ করার বিষয়টি সত্য নয় বলে নিশ্চিত হওয়া যায় পুুলিশ এবং সিসিটিভির ফুটেজ থেকে। এছাড়াও জনপ্রিয় ফ্যাক্ট চেকার প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ওয়াচের অনুসন্ধানেও ‘চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ করার জেরে খুনের’বিষয়টিকে ভুয়া দাবি করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) রবিউল হাসান বলেন, ‘সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার আগমুহূর্তের দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে। এতে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের কয়েকজন সদস্যকে দেশীয় অস্ত্র হাতে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করতে দেখা যায়। পেছন থেকে সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিও করায় তাকেই টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে।’
এর আগে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান গণমাধ্যমকে জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে।