আর্কাইভ  রবিবার ● ১৭ আগস্ট ২০২৫ ● ২ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ১৭ আগস্ট ২০২৫
আন্দোলনে আদায় করা হবে : জামায়াত
কোনোভাবেই মানা সম্ভব নয় : বিএনপি

পিআর নিয়ে তীব্র বিরোধ

রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, সকাল ০৬:২৬

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষিত হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে জুলাই সনদ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। গতকাল রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। এতে আগামীতে সংখ্যানুপাতিক-পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হবে কি না এ বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী নির্বাচনে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পিআর ইস্যু। বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। তারা বলছেন, আপাতত অপ্রচলিত এই পদ্ধতির নির্বাচনের সুযোগ নেই। ভোটাররা এই পদ্ধতির নির্বাচনের সঙ্গে পরিচিত নয়। তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ নিবন্ধিত ৫৫টি রাজনৈতিক দলের ১৮টি এই পদ্ধপিতে নির্বাচনে পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কবলে পড়ছে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষ তার নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় একজন ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখে অভ্যস্ত। যিনি তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাকে দেখেই ভোট দেয়। একাধিক প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে ভোটের আগ্রহ কমিয়ে দেবে এবং কার্যকরী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো বিধানও এখানে নেই। একজন জনপ্রিয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি নির্বাচনে জয়লাভ করলেও কোথাও এমপি হতে পারবেন না। এ রকম বহুবিধ অসুবিধা আছে পিআর পদ্ধতিতে। এসব কারণে কোনোমতেই পিআর মানা সম্ভব না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না এবং জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ কমে যাবে, সংলাপের সংস্কৃতি বৃদ্ধি পাবে এবং ভোটের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে সব দলের প্রতিনিধিত্ব হবে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে সহায়ক হবে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ৫৩ বছর দেশে আসনভিত্তিক নির্বাচন হয়েছে। এবার পিআর পদ্ধতিতে দলভিত্তিক নির্বাচন চাই। এতে প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়ন হবে। এত বছর ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি ছিল। বর্তমান সরকার সংস্কারের মাধ্যমে জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচনে ওয়াদাবদ্ধ। ওয়াদা পূরণ করতে হলে পিআর মানতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। ড. আযাদ বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যার বিচার ছাড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের পক্ষে নয়। আসন্ন নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি একটি বিপ্লব-পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সুযোগ।

 

ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়েই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর। তার পরও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ সমমনা কয়েকটি দল। সভা-সমাবেশে পিআর পদ্ধতির দাবিতে জোরালো বক্তব্যের পাশাপাশি জনমত গঠনে তৎপর। এজন্য ধারাবাহিক সভা-সমাবেশ এবং গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ইতোমধ্যে। বুধবার রাজধানীর বিজয়নগরে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জামায়াত। ইসলামী আন্দোলন একই দিন সিইসির সঙ্গে দেখা করে এই ইস্যু নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার দাবি জানায়। আর আগে পিআরের পক্ষে জনমত গঠনে গত ২৮ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন বিভিন্ন দলের নেতারা।

 

১০টি রাজনৈতিক দল একমঞ্চে পিআর পদ্ধতির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেছেন, এ পদ্ধতি না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। বাড়তি যোগ হয়েছে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না’ মন্তব্য। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সরকার প্রধানের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি পিআর পদ্ধতিতে ভোটের প্রস্তাবকে আমলেই নিতে রাজি নয়। বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তারা বলছে, সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি অংশ নিজেদের স্বার্থে এই নতুন ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করতে পারে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভোটের শতকরা হিসাবে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।

মন্তব্য করুন


Link copied