নিউজ ডেস্ক: বারবার বিপর্যয়ের মুখোমুখি ভারতের পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের চাপ নিতে পারছে না পাহাড় ও প্রকৃতি। এভাবে চললে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে।জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ষা মৌসুমে একের পর এক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ড। ৫ আগস্ট ধরালীর পরে চামোলি জেলায় দুর্যোগ দেখা দেয়। এর আগে ২০২১ সালে সেখানে মহাবিপর্যয় হয়েছিল। শুক্রবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টির ফলে থারালির বিভিন্ন অংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোটদ্বীপ, রাদিবাগ, আপার বাজার, কুলসারি, চেপডো, সাগওয়ারা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গা প্রকৃতির রোষে পড়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) জানিয়েছে, হড়পা বান বা আকষ্মিক বন্যায় থারালি সরকারি কার্যালয় এবং আশেপাশের বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কয়েকজনের নিখোঁজ হওয়ার খবরও রয়েছে। সাগওয়ারা গ্রামে এক তরুণী ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছেন বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। চোপডো বাজার এলাকার এক বাসিন্দার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে টুনরি এলাকায় বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় পিণ্ডার নদী। থারালির সঙ্গে সংযোগের পথ কর্ণপ্রয়াগ-গোয়ালদাম জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। থারালি থেকে সাগওয়ারা যাওয়ার রাস্তাটিও বন্ধ রাখা হয়েছে ধসের কারণে। বন্ধ রয়েছে ডুংরির দিকে যাওয়ার রাস্তা। চলতি পরিস্থিতিতে তিনটি ব্লকের সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। একাধিক বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগানে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড়ি এলাকায় বাসিন্দাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও পর্যটনের চাহিদাকে মাথায় রেখে গত কয়েক বছরে নির্মাণের কাজ চলেছে দ্রুত গতিতে, নগরায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীখাতের মধ্যে থাবা দিয়েছে উন্নয়ন। গড়ে উঠেছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, অন্য প্রয়োজনে নদীর বুকে গভীর গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এসবের জন্য গাছ কাটা পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে মাটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। মাটির উপরে পরিকাঠামোর চাপ বেড়েছে। এই ভার বহনের ক্ষমতা হারিয়েছে ভূপৃষ্ঠ। ফলে ধসের প্রবণতা বেড়েছে। দুর্বল ভুস্তর আলগা হয়ে বিপদ ডেকে আনছে। স্প্রিঙ্গার নেচার প্রকাশিত পত্রিকা ‘জিওটেকনিক্যাল অ্যান্ড জিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং'–এ লেখা হয়েছে, কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রীকে জুড়ে ৮৯০ কিমি দীর্ঘ যে ‘চারধাম হাইওয়ে’ তৈরি করা হচ্ছে, সেই এলাকা বরাবর গত কয়েক বছরে ৮১১টি ধস হয়েছে।
নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘হিমালয় একটি নবীন পর্বত। এর গঠনের প্রক্রিয়া এখনো চলছে। ফলে এই পর্বতমালায় অনেক ফাটল ও চ্যুতি আছে। অর্থাৎ, হিমালয় যে টেকটনিক প্লেটের উপরে অবস্থিত, সেটা স্থিতিশীল নয়। এমন এলাকায় চারধাম সড়কের জন্য সম্প্রসারণের কাজ চলছে। হৃষীকেশ থেকে রেললাইন চারধাম নিয়ে যেতে ১৪৭টা জায়গায় সুড়ঙ্গ করা হচ্ছে। সুড়ঙ্গ করতে গেলে বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। এর ফলে আরও দুর্বল হচ্ছে পাহাড়ের স্থিতি। একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে মাটির ধারণক্ষমতা কমেছে।