আর্কাইভ  বুধবার ● ২৭ আগস্ট ২০২৫ ● ১২ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২৭ আগস্ট ২০২৫
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডিসি ডিবি হারুনের দাপটে ভিন্ন খাতে যায় মামলার তদন্ত

মুনিয়া হত্যারহস্য ফাঁস
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডিসি ডিবি হারুনের দাপটে ভিন্ন খাতে যায় মামলার তদন্ত

ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রাখুন

ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রাখুন

ভোটারদের দ্বারে প্রার্থীরা, তিন স্তরের নিরাপত্তাসহ থাকবে সেনা মোতায়েন

প্রচার শুরু, হাড্ডাহাড্ডির আভাস
ভোটারদের দ্বারে প্রার্থীরা, তিন স্তরের নিরাপত্তাসহ থাকবে সেনা মোতায়েন

চীনের পথে এনসিপির ৮ নেতা

চীনের পথে এনসিপির ৮ নেতা

হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, দুপুর ১১:২১

Advertisement Advertisement

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: আলুর দাম কম থাকায় হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। হিমাগারে রাখা ৬০ কেজির এক বস্তা আলুর উৎপাদন ব্যয় ও ভাড়া মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ পড়লেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এতে প্রতি বস্তায় লোকসান হচ্ছে অন্তত ৬০০ টাকা।

আলু চাষিরা বলছেন, বাজারে দাম না থাকায় তারা আলু বিক্রি করছেন না। ফলে হিমাগারে মজুদ কমছে না। গত বছর এ সময়ে হিমাগার থেকে ৪০ ভাগ আলু বিক্রি হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২০ ভাগেরও কম। এতে লোকসানের পাশাপাশি নতুন করে দুশ্চিন্তায় আছে হিমাগার মালিকরাও।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার টন। জেলার ৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার টন আলু। এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাননি। অথচ গত বছর ভালো দাম থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অধিকাংশ ব্যবসায়ীও কৃষকদের পাশাপাশি হিমাগারে আলু মজুদ করেছিলেন।

হিসাব অনুযায়ী, হিমাগারে আলু মজুদের সময় এক বস্তার খরচ হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। এর সঙ্গে ভাড়া যোগ করে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। কিন্তু চার মাস সংরক্ষণের পর এখন ওই এক বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। সেখান থেকে হিমাগার ভাড়া বাদ দিলে কৃষকের হাতে থাকছে মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

কালীগঞ্জের শৈলমারী গ্রামের কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, ‘লাভের আশায় হিমাগারে ৭০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। দুই মাস পর বিক্রি করে হাতে এসেছে মাত্র ২৮ হাজার টাকা। অথচ মৌসুমে বিক্রি করলে পেতাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এভাবে আলু মজুদ করে লোকসানে পড়লাম।’

আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ীর কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘৫০ বস্তা আলু রেখেছি স্থানীয় ফাতেমা হিমাগারে, কিন্তু দাম না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না। এখন বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকার মতো লোকসান হবে। অথচ আমন ধান রোপণের খরচ জোগাতে এই আলু রেখেছিলাম।’

ব্যবসায়ীরা বলেন, আলুর দাম বাড়লে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা দাম কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এখন আলুর দাম কমে গেলেও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। ১৫০ টাকা বস্তা দরে আলু কিনেছেন তারা। এখন পাইকারি বাজারে চাহিদা না থাকায় তা পাঠাতে পারছেন না। ফলে লোকসান সঙ্গী করেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই বিপদে পড়েছে।’ 

এদিকে হিমাগার মালিকদের অভিযোগ, এবার কৃষক ও ব্যবসায়ী কেউ আলু তুলতে আসছেন না। গত বছর যেখানে আগস্ট মাসের মধ্যে হিমাগার থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছিল, এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার বস্তায়। ফলে আগামী নভেম্বরের মধ্যে মজুদ পুরোপুরি খালি হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, কৃষকরা আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাইখুল আরেফিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার টন। এর মধ্যে ৭৮ হাজার টন আলু হিমাগারে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু বাজারে দাম না থাকায় কৃষকরা আলু তুলছেন না। এতে আলুর বাজার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মন্তব্য করুন


Link copied