আর্কাইভ  সোমবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ২৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রংপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

রংপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

‘নিষিদ্ধের’ আতঙ্কে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা

‘নিষিদ্ধের’ আতঙ্কে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা

ঠাকুরগাঁও ব্যবসায়ীর জীবদ্দশায় নিজের জন্য কবর খনন

ঠাকুরগাঁও ব্যবসায়ীর জীবদ্দশায় নিজের জন্য কবর খনন

রক্তলাল হয়ে উঠবে চাঁদ, কখন দেখবেন এই মহাজাগতিক মুহূর্ত?

রক্তলাল হয়ে উঠবে চাঁদ, কখন দেখবেন এই মহাজাগতিক মুহূর্ত?

‘নিষিদ্ধের’ আতঙ্কে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা

রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাত ০৯:৩৮

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: মারাত্মক দুঃসময় ও বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এক বছরের বেশি পার করেছেন ক্ষমতাচ্যুত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এ জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা সহসা এই বিপর্যয় কেটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা এখনও দেখছেন না।

এর মধ্যে দলগুলোর নিষিদ্ধের দাবি ওঠায় নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন হয় টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও। পদত্যাগের পর দ্রুত দেশত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সরকার পতনের দিনই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নিজেকে রক্ষা করতে আত্মগোপনে চলে যান। শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের অনেকেই দেশ ছাড়েন। এর ফলে ৫ আগস্টেই দলটির নেতাকর্মীর ওপর বিপর্যয় নেমে আসে এবং দলটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলের শরিক দলগুলোও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে এবং নেতাকর্মীদেরও মারাত্মক সংকট ও বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। আওয়ামী লীগের মতো ১৪ দলের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান। বিভিন্ন সময় এই জোটের কোনো কোনো দলের কেন্দ্রীয়সহ জেলা-উপজেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও নেতাকর্মীর ওপরও হামলা হয়েছে।

গত বছর ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে কত জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, এর সুনির্দিষ্ট তথ্য কেউ দিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দলটির প্রায় এক লাখ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলেরও কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভ্যুত্থানের পর ১৪ দলের দুই শীর্ষ নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তারা কারাগারেই আছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের নামে অনেকগুলো হত্যা মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখাএনা হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি ফজলে হোসেন বাদশা এই ঘটনার পর দেশের বাইরে চলে যান। তিনি ভারতে আছেন বলে জানা গেছে। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তারও আত্মগোপনে আছেন।

১৪ দলের শরিক কয়েকটি দলের নেতাকর্সীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে দলগুলোর ওপর যে বিপর্যয় নেমে আসে এবং যে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়, সেই সংকট থেকে দলগুলোর নেতাকর্মীরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি। এখনো সতর্ক হয়েই বা এক ধরনের আত্মগোপনে থেকেই দলগুলোর নেতাকর্মীদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। এখনো প্রকাশ্য কোন কর্মসূচি বা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না তারা। দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রমে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আসে এবং সেটা বহাল রয়েছে।

তবে এই দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলা হচ্ছে এবং নেতাকর্মীরা কম বেশি যেতে পারছেন। বিশেষ করে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীরা প্রায় নিয়মিত যাতায়াত করছেন। ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক কিছু কর্মসূচিও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মধ্যে পালন করা হচ্ছে। বিশেষ করে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ এ ধরনের কর্মসূচিগুলো আয়োজন করে আসছে। তবে সেটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে ও স্বল্প সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে হচ্ছে। দলগুলোর নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়েছে, বিশেষ করে গ্রেপ্তার ও হামলা আতঙ্ক। এসব ভয় ও আতঙ্ক তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা একে অপরের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

গত এক বছরে দলের কোনো কার্যক্রম না থাকলেও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে বাৎসরিক আয় ব্যয়ের হিসাব ও রিটার্ন জমা দেওয়া হয়েছে বলে দলগুলোর নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলগুলো অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে নেতাকর্মীরা কেউ কিছু বলতে পারছেন না। যদিও নিবন্ধিত দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো দলের জন্য আইনগত কোনো বাধা নেই। এ দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সে ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়ার্কার্স পার্টির এক নেতা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। অংশগ্রহণ করতে চাইলেই যে আমাদের দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে, এই নিশ্চয়তা নেই। গত এক বছর আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। যেভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে, সেভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বাধা আসতে পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এদিকে অতীতের বিভিন্ন অভিযোগে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে। বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ১২ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিভিন্ন দিক থেকে দাবির প্রেক্ষিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি (জাপা)-সহ ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।

গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় সংঘর্ষে জড়ান দুই দলের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করেন। এ সময় দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। এরপর থেকেই জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরির দলগুলোকে নিষিদ্ধের দাবি সামনে এসেছে ও জোরালো হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে এ জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের সামনে নতুন সংকট ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষণা হলে দলগুলোর নেতাকর্মীদের আরও বড় সংকটে পড়তে হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাসদের এক নেতা  বলেন, কিছু রাজনৈতিক দলের চাপে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরকম রাজনৈতিক দলগুলো থেকেই আবার ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নিষিদ্ধের দাবি তোলা হচ্ছে। গত এক বছর জোটের কোনো দল মাঠের কার্যক্রমে নেই। এই অবস্থায় কেন নিষিদ্ধের দাবি তোলা হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আমাদের কিছু বলার নেই।

মন্তব্য করুন


Link copied