আর্কাইভ  বুধবার ● ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ৯ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রংপুরে ক্লাসে ঢুকে ‘অকৃতকার্য’ অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা

শিক্ষার্থী হয়ে গেলেন স্কুল সভাপতি
রংপুরে ক্লাসে ঢুকে ‘অকৃতকার্য’ অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা

জীবিকার সন্ধানে দেশ ছেড়েছেন অভিনেতা বাপ্পী?

জীবিকার সন্ধানে দেশ ছেড়েছেন অভিনেতা বাপ্পী?

কুরিয়ারে কয়েলের বক্সে আসা ২০ হাজার পিচ ইয়াবা ধরলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস

কুরিয়ারে কয়েলের বক্সে আসা ২০ হাজার পিচ ইয়াবা ধরলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস

উত্তরসূরীর নাম ঠিক করে নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছে “রনি”

দা প্রিন্টের বিশ্লেষণী প্রতিবেদন
উত্তরসূরীর নাম ঠিক করে নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছে “রনি”

শিক্ষার্থী হয়ে গেলেন স্কুল সভাপতি

রংপুরে ক্লাসে ঢুকে ‘অকৃতকার্য’ অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাত ১১:৪৬

Advertisement

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর : রংপুরে হারাটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বেত দিয়ে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদের (ইমতি) বিরুদ্ধে। এই নির্যাতনের শিকার হয়েছে কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় নগরীর পশুরাম থানায় অনলাইনে এক অভিভাবক জিডি করেছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রংপুর মহানগরের হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ইমতিয়াজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বিলুপ্ত হলে গত ১৮ জুলাই বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন তিনি। ইমতিয়াজ ওই বিদ্যালয়ের অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের টিফিন শেষে ক্লাস চলছিল। এমন সময় ইমতিয়াজ আহম্মদ মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে গিয়ে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির কক্ষে যান। সেখানে উপস্থিতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল জানতে চান। যেসব শিক্ষার্থী ‘অকৃতকার্য’ হয়েছে, তাদের একে একে ডেকে বেধড়ক পেটান। তখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ছিলেন কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করেননি।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ইমতিয়াজ আহম্মদ হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল শুনে ‘অকৃতকার্য হওয়া’ শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর একে একে তিনটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটান।

হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহম্মেদের দাবি, তারা ঘটনাটি মীমাংসা করেছেন। রংপুর সদর উপজেলায় গত ৪ সেপ্টেম্বর হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটুনি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা স্কুলে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঘটনার ১৮ দিন পার হলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি হারাটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ‘টিফিনের পর পঞ্চম ক্লাসে স্যারের (শ্রেণী শিক্ষক) সঙ্গে আমরা সবাই উপস্থিত আছি। ক্লাস চলাকালে সভাপতি একটা বেত নিয়ে ক্লাসে ঢুকে বলতেছে, কে কে ফেল করছো, দাঁড়াও। আমরা দাঁড়াই। পরে একেকজন করে ডাকছে, আর মারছে। আমাদের মারছে, মেয়েদেরও মারছে। মাইরে শরীরের অংশ লাল হয়ে গেছে। নবম শ্রেণিতে মারধর করতে বেত ভেঙে ফেলেছে।

দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সীমান্ত শীল ও শিমুল শর্মা বলেছে, তাদের বই দেওয়া হয়েছিল গত এপ্রিলে। ক্লাস হয়েছিল অল্প কয়েক দিন। আবার প্রশ্ন ছিল নতুন। এ কারণে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা বেশি কঠিন ছিল। বই দেরিতে দেওয়া ও পাঠ্যক্রম নতুন সৃজনশীল হওয়ায় তাদের ক্লাসের তিন ভাগের আড়াই ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, আহ্বায়ক এসে এসব কিছুই শোনেননি। তিনি শিক্ষার্থীদের গরু পেটানোর মতো  মারধর করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, সেদিন অর্ধশতর বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়। জ্বর ও ব্যথা না কমায় শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন ভর্তি রাখতে হয়েছিল বলে জানান তার মা দুলালী বেগম। আইরিনের চাচা ইয়াকুব আলী বলেন, মাইরে আইরিনের হাত ফুলে গেছে।

শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টা এ রকম নয়। আমি স্কুলের সভাপতি হিসেবে ছয় মাস ধরে স্কুলে পরিশ্রম করতেছি। বাচ্চাগুলো যেন ভালো রেজাল্ট করে। ওদের ক্লাসের যেগুলো সমস্যা ছিল, সমাধান করেছি। সে জন্য একটু রাগারাগি করছি, শাসন করছি, এই আরকি। এটা নিয়া ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো অভিযোগ নেই।

শাসনের নামে এভাবে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন করতে পারেন কি না তা জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহম্মদের বলেন, ‘আমি নিজেও এই এলাকার বড় ভাই। একটু শাসন করছি। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছিল। এলাকার কিছু ব্যক্তি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করেছিল। তবে এটা মিটমাট হয়েছে।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনাটি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার দুই দিন পর ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জবাব ও বিচার চান। ভুক্তভোগী একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক রংপুর নগরের পরশুরাম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

রংপুরের সদর উপজেলার হারাটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের দাবি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্মতিতে তিনি এ বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। কী ঘটনা ঘটেছিল তা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন ওটা কিছু না। উনি বিদ্যালয়ে এসে বাচ্চাদের বলে ভালো পড়াশুনা করো। ভালো রেজাল্ট করো। এই আরকি।

শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ওটা তো পারেন না। বাচ্চা, অভিভাবক নিয়ে মীমাংসা করে দিছি। 

রংপুর সদর উপজেলার হারাটির স্থানীয় বাসিন্দা ও মহানগর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলামের মতে, এটা কোনো ‘শাসন’ নয়, শিক্ষার্থী উপর নির্যাতন ফৌজদারি আইনে অপরাধ। প্রধান শিক্ষকের উচিত ছিল বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। তা না করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইদুল ইসলাম বলেন, ইমতিয়াজ সভাপতি হিসেবে স্কুলে গিয়ে শাসন করেছিলেন। এ ঘটনায় একজন অভিভাবক অনলাইনে জিডি করেন। বিদ্যালয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।

মন্তব্য করুন


Link copied