নিউজ ডেস্ক: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় দেশের রাজনীতি দাঁড়িয়ে গেছে এক নতুন সন্ধিক্ষণে। সংকট আর সম্ভাবনার দোলাচলে ভবিষ্যতের রাজনীতি কোন পথে যাবে, তা নিয়ে এখন চলছে নানা বিশ্লেষণ। ক্ষমতার বাইরে থাকা উদারপন্থী দলগুলোর ব্যর্থতার সুযোগ নিতে পারে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটাররা ধর্মকে প্রভাবক হিসেবে বিবেচনা করলেও গোড়ামীকে প্রশ্রয় দেবেন না।
গেল তিন দশকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে অন্য কোন দল বা শক্তির প্রসঙ্গ যখনই উঠেছে, তখনই আলোচনায় এসেছে তৃতীয় শক্তির বিষয়টি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান আওয়ামী লীগকে কার্যত রাজনীতির মাঠে অপাংক্তেয় করে দিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে নতুন মেরুকরণের গুঞ্জন। তবে এটি নিছক গুঞ্জন নাকি যুগসন্ধিক্ষণের ইঙ্গিত, সেই প্রশ্নও উত্থাপিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, দুইটা দলই মানুষকে হতাশ করেছে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর দখলদারিত্ব থেকে মানুষ মুক্তি চায়। তাই তারা তৃণমূলভিত্তিক গণতন্ত্রের দাবি তুলছে। তার মতে, আগামীর রাজনীতিতে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলেও ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি মেনে নেবে না জনগণ। ধর্মভিত্তিক দল ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করলেও জনগণ তা সমর্থন করবে না। তবে ইসলামী মূল্যবোধের নামে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে তরুণ প্রজন্ম গুরুত্ব দেবে।
প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘যদি ধর্মনিরপেক্ষ বা কাছাকাছি আদর্শের দলগুলো জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে অন্যধরনের শক্তি জায়গা দখল করবেই। তবে তারা যদি ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি করে কিংবা প্রচলিত সামাজিক আচার-আচরণ দমন করতে চায়, জনগণ তাদেরও প্রত্যাখ্যান করবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান মনে করেন, ভোটাররা এখন আর শুধু প্রতীক দেখে সিদ্ধান্ত নেন না। তারা অতীত কর্মকাণ্ড, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং জাতীয় স্বার্থে কোনো চক্রান্তে জড়ানোর সম্ভাবনা আছে কি না, এসব বিষয়েও হিসাব-নিকাশ করছেন। তার মতে, তৃতীয় কোনো শক্তি সামনে এলেও জনগণ তাদের প্রতিও একই রকম কড়া মূল্যায়ন করবে।
রাজনীতির মাঠে এক দলের ব্যর্থতা অন্য দলের সুযোগ তৈরি করলেও দিনশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে জনগণের আস্থা অর্জন। গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনীতি কোন চেহারা নেবে, তার উত্তর মিলবে হয়তো ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে।