নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর সোবহানবাগ এলাকায় নিজ বাসা থেকে গতকাল সন্ধ্যায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা স্ট্রিমের গ্রাফিক ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের (২৮) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি এ বছরের শুরুতে ঢাকা স্ট্রিমে প্রশিক্ষণার্থী গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে যোগ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শের-ই-বাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম এটিকে আত্মহত্যা বলে সন্দেহ করছেন।
তিনি জানান, স্বর্ণময়ী পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ঘটনার সময় তার ভাই ও ভাবী বাসায় ছিলেন। বাবা-মা ছিলেন গ্রামের বাড়িতে।
কর্মক্ষেত্রে 'অনুপযুক্ত আচরণ' করার অভিযোগে ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা কনটেন্ট এডিটর আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে যৌননিপীড়নের অভিযোগকারীদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। এই অভিযোগ দায়েরের কয়েক মাস পর তার মৃত্যু ঘটে।
স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, এই অভিযোগ দায়েরের সঙ্গে তার মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা।
স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মৃত্যুতে ঢাকা স্ট্রিম আজ রোববার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, 'গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আমাদের সহকর্মী স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের অকাল মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকা স্ট্রিম পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। পুলিশ ইতোমধ্যে মরদেহের ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সামগ্রিক ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি। ঢাকা স্ট্রিম এক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।
স্বর্ণময়ী বিশ্বাস ঢাকা স্ট্রিমের গ্রাফিক ডিজাইনার ছিলেন। কর্মপরিবেশে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক; সহকর্মী হিসেবে ছিলেন বন্ধুভাবাপন্ন। দক্ষতার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমন একজন সহকর্মী হারিয়ে আমরা যখন শোকে মুহ্যমান, তখন স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একধরনের প্রচারণা আমাদের চোখে পড়েছে।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে, ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা কনটেন্ট এডিটর আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে গত ১৩ জুলাই মানবসম্পদ বিভাগে 'লজিং কমপ্লেইন্ট এগেইন্সট ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট বিহেভিয়ার ইন দ্য ওয়ার্কপ্লেস' শিরোনামে একটি অভিযোগপত্র জমা পড়ে। অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়—
আলতাফ শাহনেওয়াজকে তাৎক্ষণিকভাবে বার্তাকক্ষ থেকে প্রত্যাহার করা হয়; এবং অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে সহকর্মীদের সঙ্গে আলতাফ শাহনেওয়াজের কিছু ক্ষেত্রে অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে ঢাকা স্ট্রিম কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে—
আলতাফ শাহনেওয়াজকে বার্তাকক্ষ থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়; ঢাকা স্ট্রিম কর্তৃপক্ষ কর্মীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের একটি আচরণবিধি চূড়ান্ত করে।
কর্তৃপক্ষের এসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অভিযোগকারীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
ঢাকা স্ট্রিমের পক্ষ থেকে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে সব সহকর্মীকে অবহিত করা হয় এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আচরণ সম্পর্কে সহকর্মীদের আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে যথাযথ আইনি তদন্তের আগেই অভিযোগপত্রটির সঙ্গে স্বর্ণময়ীর মর্মান্তিক মৃত্যুকে জড়িয়ে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
আমরা প্রয়াত সহকর্মী স্বর্ণময়ীর পরিবারের সঙ্গে আছি। তাঁর পরিবারের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবার প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করার অনুরোধ করছি। আমরা ঢাকা স্ট্রিম পরিবার যেকোনো ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলাম এবং থাকব। কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সচেতন ও অঙ্গীকারবদ্ধ।'
এ বিষয়ে জানতে আলতাফ শাহনেওয়াজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর ঘটনায় শের-ই-বাংলা নগর থানা একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।