আর্কাইভ  বুধবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ● ১৪ কার্তিক ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২৫
বেগম খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমানকে প্রার্থী চান নেতা-কর্মীরা

ভোটের হাওয়া
বেগম খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমানকে প্রার্থী চান নেতা-কর্মীরা

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে ঐকমত্য কমিশন: সালাহউদ্দিন আহমদ

অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে ঐকমত্য কমিশন: সালাহউদ্দিন আহমদ

তিস্তার ২৫টি চরের মানুষের একমাত্র ভরসা ভার ও নৌকা

তিস্তার ২৫টি চরের মানুষের একমাত্র ভরসা ভার ও নৌকা

আ.লীগের লগি-বৈঠা হত্যাযজ্ঞ: সুধাসদন থেকে সরবরাহ করা হয় অস্ত্র

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল ০৭:৫৪

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ১৯তম বার্ষিকী মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর)। ২০০৬ সালের এ দিনে ফ্যাসিস্ট দলটির ক্যাডাররা রাজধানীর পল্টন এলাকায় লগি-বৈঠাসহ অস্ত্র হাতে নিয়ে পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে তারা দিন-দুপুরে পিটিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে। এমনকি লাশের ওপর নৃত্যও করে বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা।

সেদিন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদন থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয় বলে খোদ তার ব্যক্তিগত সহকারী ড. আওলাদ হোসেনের এক লেখায় উঠে আসে। ওই নৃশংসতার ঘটনায় দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে মামলা হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে তা প্রত্যাহার করে বর্বরতম ওই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের স্বজনরা ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

গণমাধ্যমে সেসময় প্রকাশিত ঘটনার বর্ণনায় যায়, ২০০৬ সালে বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয় বিরোধী জোট আওয়ামী নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। খোদ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের লগি-বৈঠাসহ অস্ত্র নিয়ে মিছিলে যোগ দিতে নির্দেশ দেন। তারই নির্দেশে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের ক্যাডাররা লগি-বৈঠাসহ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মুক্তাঙ্গন-পল্টন এলাকায় মহড়া দিতে থাকে।

অন্যদিকে সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের ডাক দেয় জামায়াতে ইসলামী। বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা ও অস্ত্র হাতে নিয়ে জামায়াতের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। পল্টনের গলিতে ঢুকে নিরস্ত্র জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের পেটাতে শুরু করে তারা। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ও জামায়াতকর্মী জসীম উদ্দিনসহ ছয়জন ওইদিন খুন হন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা লাশের ওপর দাঁড়িয়ে নৃত্যোল্লাস করতে থাকে। পল্টন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে লগি-বৈঠা বাহিনী তাণ্ডব চালাতে থাকে।

বিকেলে জামায়াত ইসলামীর তৎকালীন আমির ও বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে পাশের র‌্যাংগস টাওয়ারের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো হাতবোমা নিক্ষেপ করা হতে থাকে। দফায় দফায় ছোড়া হতে থাকে গুলি। 

পরের দুই দিনও সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর হাসিনার লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডব চলে। আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের এবং তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতে থাকে।

তার আগে ১৮ সেপ্টেম্বর পল্টনের সমাবেশে শেখ হাসিনা লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকা অবরোধের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশে ২৭ অক্টোবর রাত থেকেই দেশজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। চালাতে থাকে অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা। পরদিন ২৮ অক্টোবর তারা পৈশাচিকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তাদের নাশকতায় সৃষ্ট পরিস্থিতিরই ফাঁক গলে দেশে চেপে বসে বিতর্কিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ সরকার, যাদের কারণে দেশ দুই বছর গণতন্ত্রহীন থাকে। পরে সেই বিতর্কিত সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ জয়ে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে।

২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবিরের ওপর আক্রমণসহ যাবতীয় নাশকতার অস্ত্র ও রসদ আসে হাসিনার তৎকালীন বাসভবন সুধাসদন থেকে। এই কথা উঠে আসে হাসিনারই তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী ড. আওলাদ হোসেনের এক লেখায়। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ বিষয়ক এক কলামে তিনি লেখেন, ‘…হঠাৎ জাহাঙ্গীর কবির নানক (তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান) ভাইয়ের ফোন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, আমাদের ‘খাবার’ শেষ। পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছি। জরুরি ভিত্তিতে খাবার লাগবে। বুঝতে সামান্য সময় নিলাম। আদিষ্ট হলাম, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

তিনি লিখেছেন, ‘সুধাসদনের চারদিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক ঘোরাফেরা করছে। চিন্তা করছি, কীভাবে ‘খাবার’ পাঠাব? সুধাসদনের মূল ফটকের সামনে একটি টিভি চ্যানেলের গাড়ি। রিপোর্টারের খোঁজ নিয়ে জানলাম, শামিম আহমেদ, ছাত্র-জীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তাকে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলে সহযোগিতা চাইলাম। তিনি রাজি হলেন। তার গাড়িতে কয়েক শত পানি ভর্তি বোতল এবং এর নিচে শত্রু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ‘খাবার’ দিলাম। শামিম আহমেদ পল্টন মোড়ে নানক ভাইয়ের কাছে সব ‘খাবারের সরঞ্জামাদি’ হস্তান্তর করলেন। ‘খাবার’ পেয়ে নেতা-কর্মীদের মনোবল বেড়ে গেল। নতুন উদ্যমে শত্রুর মোকাবিলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ল।’

ঠাণ্ডা মাথায় দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত ওই হত্যাযজ্ঞের পরদিন পল্টন মডেল থানায় মামলা হয়। এতে শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা হয়। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে। ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। 

কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরের ১৭ আগস্ট লগি-বৈঠা হত্যাযজ্ঞের মামলাটিও প্রত্যাহার করা হয়।

সেদিনের সেই হত্যাকাণ্ডে শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা এখনো বিচার প্রত্যাশায় দিন গুনছে। তারা বলছেন, স্বজনকে ফিরে না পেলেও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু হাসিনার সরকার সব আসামিকে অব্যাহতি দিলে তাদের সে আশা শেষ হয়ে যায়। তাদের এখন একটাই চাওয়া -যেন হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়।

ওই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী বলছেন, মামলার নথি সংগ্রহ ও পর্যালোচনা চলছে। নথি পর্যালোচনার পর এ বছরই উচ্চ আদালতে আপিল করে মামলাটি সচল করার চেষ্টা করবেন তারা। উচ্চ আদালত এ বিষয়ে সুযোগ দেবে বলে প্রত্যাশী তারা।

লগি-বৈঠা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই দিনের ধারাবাহিকতায় তারা দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতির সূচনা করে, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তখন থেকেই দেশকে রাজনীতিশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকারসহ জনগণের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, সেদিন ১৪ দলের সন্ত্রাসীদের হামলায় ঢাকাসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হন এবং আহত হন সহস্রাধিক নেতাকর্মী। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে মৃতদেহের ওপর নৃত্য করে বর্বর আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে, যা সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এই ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত মানবতাবিরোধী গণহত্যা।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের রক্ষা করে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ তীব্র গণআন্দোলনের মুখে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই পটপরিবর্তনের ফলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের জনগণের দাবি-অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied