সিলেট: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবাইকে নিয়েই সামনে এগোবে উল্লেখ করে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তারা নির্বাচিত হলে ‘বন্ধু দলকে’ নিয়ে দেশ গঠন করবেন।
১৪ দিনের বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিলেট নগরের একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা সবাইকে নিয়েই সামনে এগোবো। আমাদের বন্ধু সংগঠন বলেছে তারা নির্বাচিত হলে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সবাইকে নিয়ে দেশ গঠন করবে। আল্লাহ যদি তার মেহেরবানি ও জনগণের ভালোবাসায় আমাদের নির্বাচিত করেন, আমরা তাদেরও (বন্ধু সংগঠন) সঙ্গে নিয়ে দেশ গঠন করবো।
‘আর যদি আমাদের বিরোধী দলে বসতে হয়, আমরা ভালো কাজে কর্মীর মতো সঙ্গী হবো। যদি পুরোনো কায়দায় লিপ্ত হয়, তাহলে আগেও যেমন জীবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, আগামীতেও ছাড় দেবো না।’
শফিকুর রহমান বলেন, জনগণ তাদের ওপর ট্যাক্স বসানোর জন্য আমাদের ভোট দেবে না, বরং জনগণের হকের পাহারাদারির জন্য ভোট দেবে। সেই পাহারাদারি করতে পারলেই আমাদের রাজনীতি স্বার্থক, নাহলে আমরা ব্যর্থ। আমরা ব্যর্থ হতে চাই না। তবে আমরা ভুল করলে শক্ত সমালোচনা চাই।
সরকারি অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দে জামায়াতের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আগ্রহী হবেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিজয়ী হলে জামায়াতের এমপিরা সরকারি কোনো প্লট গ্রহণ করবেন না। আমরা ঘোষণা দিয়েছি- আমাদের জীবন এখন যেমন আছেন তখনও তেমন থাকবে। এজন্য আমরা বিনা ট্যাক্সের গাড়িও চড়বো না।
তিনি বলেন, প্রবাসে ১৪ দিন ছিলাম। প্রবাসীদের বলেছি- আপনাদের ভোটের অধিকার ছিল না, তার জন্য আমরাই লড়াই করেছি। অনেক দল তার বিরোধিতা করে বলেছে- প্রবাসীরা শুধু ফরেন কারেন্সি দেবে, তাদের ভোটের কী দরকার। আমরা বলেছি অবশ্যই তাদের ভোটের অধিকার দিতে হবে, কিছু নিতে হলে ন্যায্যটা দিতে হবে।
ডা. শফিকুর বলেন, প্রথমেই হয়তো শতভাগ ভোটার রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসবে না। কিন্তু যতজন আসবে সেটাও অনেক। আগামীতে দেশ গড়ার সব কাজে প্রবাসীরা যে অনুপাতে বিদেশে আছেন, সেই অনুপাতে সব জায়গায় তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। এটাই ন্যায়বিচার।
তিনি জানান, দেশের কয়েকটি সক্রিয় ইসলামিক দল এবং দেশপ্রেমিক দল ইতোমধ্যে জামায়াতকে সহযোগিতা করছে এবং আরও অনেক দল তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করছে।
৫ আগস্টের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যারা চলে গিয়েছে, তাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বারবার বলতেন- কোনো কারণে যদি আওয়ামী লীগের পতন হয় তাহলে তাদের পাঁচ লাখ মানুষ খুন হবে। আমরা যদি আসলেই তাদের মতো চিন্তা করতাম, তাহলে দেশ বধ্যভূমিতে পরিণত হতো। কিন্তু আমরা সবাইকে অনুরোধ করলাম কারও প্রতি প্রতিশোধ না নিতে। আওয়ামী লীগ দায়িত্বজ্ঞানহীন হলেও এই জাতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে।
অবশ্য অভ্যুত্থান পরবর্তী সংঘাত-প্রাণহানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, অনেকে সুযোগে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসাও মিটিয়েছে। তবে আমরা শুধু বলে বসেছিলাম না, এজন্য সারাদেশে মসজিদ-মন্দির-চার্চ-মঠ ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিয়েছেন আমাদের নেতা-কর্মীরা। এ দায়িত্বে অন্যান্য দলও একই ডাক দিয়েছে, সবাই মিলেমিশে কাজ করেছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে লুটেরারা লুটতরাজ করবে না, দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না, ব্যাংক ডাকাতরা ডাকাতি করবে না, ইজ্জত লুণ্ঠনকারীরা আর চোখ তুলে তাকাবে না– সেইরকম একটি সমাজ আমরা বানাতে চাই। শিক্ষার পরিবর্তন আনতে চাই, দুর্নীতির জট কেটে দিতে চাই এবং সামাজিক সুবিচার কায়েম করতে চাই, বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন করতে চাই।