নিউজ ডেস্ক: দাদি খালেদা জিয়ার কোলে ছবি দিয়ে নিজের শৈশবের স্মৃতি এবং প্রত্যাশা নিয়ে আবেগময় বার্তা দিয়েছেন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান, দিয়েছেন রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার ইংগিত।
একদিন পর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন জাইমা। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাবা তারেক রহমান এবং মা জুবাইদা রহমানের সঙ্গে যখন দেশ ছেড়েছিলেন, তখন তিনি শিশু।
মঙ্গলবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “দেশে ফিরে ইনশাআল্লাহ, আমি দাদুর পাশে থাকতে চাই। এই সময়টাতে আব্বুকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে চাই। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য সর্বস্ব দিয়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চাই।”
শৈশব স্মৃতি স্মরণ করে জাইমা লিখেছেন, “আমার বয়স তখন এগারো। আমাদের স্কুলের ফুটবল টিম একটা টুর্নামেন্ট জিতেছিল, আর আমি মেডেল পেয়েছিলাম। আম্মু আমাকে সরাসরি দাদুর (খালেদা জিয়া) অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন, আমি যেন নিজেই দাদুকে আমার বিজয়ের গল্পটা বলতে পারি; তাকে আমার বিজয়ের মেডেলটা দেখাতে পারি।
“আমি খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে গোলকিপার হিসেবে কী-কী করেছি, সেটা বলছিলাম; আর স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম, দাদু প্রচণ্ড মনোযোগ নিয়ে আমাকে শুনছেন। তিনি এতটাই গর্বিত হয়েছিলেন যে, পরে সেই গল্পটা তিনি অন্যদের কাছেও বলতেন।”
সেই জাইমা লন্ডনে লেখাপড়া করে এখন ব্যারিস্টার। তিনি লিখেছেন, “আমি সব সময়ই জানতাম, আমার দাদুর কাঁধে একটা দেশের দায়িত্ব। তবুও আমার স্মৃতিতে দাদু হলেন পরিবারকে আগলে রাখা একজন মমতাময়ী অভিভাবক। লাখো মানুষের কাছে তিনি ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমার আর আমার কাজিনদের কাছে তিনি ছিলেন ‘দাদু’। আমাদের ‘দাদু’।
“তিনি সব সময় আমাদের খেয়াল রাখতেন, আমাদের জন্য সময় বের করতেন, আর যেসব মুহূর্ত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেগুলোতে আমাদের সাহস দিতেন, উজ্জীবিত করতেন।”
সেই ছোট-ছোট মুহূর্তগুলো থেকেই ‘নেতৃত্বের প্রথম শিক্ষা’ পাওয়ার কথা, ‘নম্রতা, আন্তরিকতা আর মন দিয়ে শোনার মানসিকতা’ অর্জনের কথা লিখেছেন জাইমা।
তিনি লিখেছেন, দেশের বাইরে কাটানো ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা তার ‘জীবন অনেকভাবে বদলে দিয়েছে’; কিন্তু তিনি কখনো ‘শিকড় ভুলে যাননি’।
“কারণ, আমাদের সত্তার যে ভিত্তি, আমাদের যে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ; সেটিই আমাদেরকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, পরিচয় বহন করে। প্রবাসে থাকা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের অনেক বাংলাদেশির মত আমিও নিজ দেশের বাইরে, ভিন্ন দেশে অনেকগুলো বছর কাটিয়েছি। লন্ডনের দিনগুলো আমাকে বাস্তববাদী করেছে, একটা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। যদিও আমার হৃদয়-মন সব সময় বাংলাদেশেই ছিল।”
জাইমা লিখেছেন, “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাকে শৃঙ্খলা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান শিখিয়েছে। তবে মানুষের সঙ্গে কাজ করা আমাকে শিখিয়েছে আরও অনেক বেশি; শিখিয়েছে দায়িত্বশীল হতে, বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে।
“আইন পেশায় কাজ করার সময় কাছ থেকে দেখা মানুষগুলোর গল্প, আর সেই গল্পগুলোর যৌক্তিক এবং আইনগত সমাধান খোঁজার দায়িত্ব আমাকে আলোড়িত করে। প্রত্যেক ক্লায়েন্ট, প্রতিটি মামলা, প্রতিটি মানুষের সমস্যা, কারও না কারও জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, অবহেলার শিকার হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই বিশ্বাস দিতে হয় যে, তাদের বিষয়টি দেখা হচ্ছে, শোনা হচ্ছে, সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
খালেদা জিয়ার নাতনির উপলব্ধি, কারও জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনে তার পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা যে শিক্ষা দেয়, সেটা কোনো ক্লাসরুম দিতে পারে না। আর এই প্রতিটি ধাপ তাকে ভাবতে শিখিয়েছে, মানুষ হিসেবে তিনি কেমন হতে চান।
বাবা তারেক রহমান, মা জুবাইদা রহমান আর পোষ্য জেবুর সঙ্গে জাইমা রহমান।
দাদা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেখার সুযোগ হয়নি, সে কথা তুলে ধরে ১৯৯৫ সালে জন্ম নেওয়া জাইমা লিখেছেন, “কিন্তু তার সততা আর দেশপ্রেমের কথা সব সময় শুনে এসেছি। দাদু আর আব্বু সেই আদর্শটাই বয়ে নিয়ে চলেছেন।
“চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় এবং ৫ অগাস্টের আগে-পরের সময়টাতে আমি যতটুকু পেরেছি, নেপথ্যে থেকে সাধ্যমত ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। অধিকাংশ সময় বলেছি কম, বরং শুনেছি বেশি। ছোট-ছোট কাজের মাধ্যমে তাদের বোঝা একটু হালকা করার চেষ্টা করেছি।”
দেশে ফেরার কথা জানাতে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জাইমা বলেছেন।
তিনি লিখেছেন, “নিজের চোখে, নিজের অভিজ্ঞতায় প্রিয় বাংলাদেশকে নতুন করে জানতে চাই; মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চাই। যেভাবে এগুনো দরকার, আমি চাই বাংলাদেশ আবারো সেভাবে সামনে এগিয়ে যাক, গর্জে উঠুক।
“আমি জানি, আমার পরিবারকে ঘিরে দেশের জনগণের কৌতূহল রয়েছে, প্রত্যাশা রয়েছে। সেটি কখনো আশার, কখনো প্রশ্নের। সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়ভারও রয়েছে। জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের চাপ আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে অনুভব করি; পরিবারে, বন্ধুত্বে, সমাজে।”
জাইমা বলেন, “সংক্ষেপে, আমার নিজের ভাষায়, এই হলো আমার গল্প। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা নিজস্ব গল্প আছে। এই গল্পগুলোকে ধারণ করে, আমরা সবাই হয়তো একসঙ্গে বাকি পথটা হাঁটতে পারি।”