আর্কাইভ  শুক্রবার ● ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ২১ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আচরণবিধিতে ব্যাপক পরিবর্তন

আচরণবিধিতে ব্যাপক পরিবর্তন

রংপুর বিভাগের ৩ জেলা সহ ১৮ জেলার ১০৫টি পয়েন্ট মাদকের প্রধান রুট

রংপুর বিভাগের ৩ জেলা সহ ১৮ জেলার ১০৫টি পয়েন্ট মাদকের প্রধান রুট

সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ

সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে আর লাগবে না জিডি

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে আর লাগবে না জিডি

বাধা-বিপত্তির মুখেও সক্রিয় জাতীয় পার্টি

বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিকাল ০৬:৩৯

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফের জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। জামায়াত, এনসিপি ও গণঅধিকারসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি অব্যাহত রেখেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নিষিদ্ধের দাবি জানায়। এর আগে গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের বেশ কয়েকটি কার্যালয়ে হামলাহয়। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর ও উত্তরার বাড়িতেও হামলা হয়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার আলোচনা জোরালো হচ্ছে। চেষ্টা চলছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জাপা নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় করার। এসব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাপা। 

উত্তরায় নিজ বাড়িতে ও কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিদিন বৈঠক করতে দেখা গেছে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। এ ছাড়া দলের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের আনাগোনাও বেড়েছে। এদিকে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা জিএম কাদেরকে পন্থিদের চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। ওই সব নেতারা দলীয় প্রতীক ও অফিস দখলের চিন্তাও করছে বলে জানা গেছে। ভেতর-বাইরের এমন রাজনৈতিক চাপ, জুলাই অভ্যুত্থানের মামলা-হামলাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছেন জিএম কাদের ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তবে যত চ্যালেঞ্জ আসুক রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। 

গত ২৯ আগস্ট শুক্রবার গণঅধিকার পষিদের সভাপতি নুরুল হক নূরসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ফের জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হতে থাকে। ওই দিনই জাপার বিভিন্ন কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর হয়। পরের দিন ৩০ আগস্ট শনিবারও দলের চেয়ারম্যানের বাসা ও দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও হামলা হয়। উত্তরায় জিএম কাদেরের বাসার দেয়ালে পাবলিক টয়লেট, স্বৈরাচারের দোসর লিখে দেয় ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামক একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সময়ে জিএম কাদেরের কুশপুত্তলিকা দাহ করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়। 

ওই দিন বিকালে কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের মিটিং চলাকালে ফের হামলা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং নেতাকর্মীদের অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। 

ভিপি নূর গুরুতর আহত হওয়া ইস্যুতে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও সারাদেশের বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বিএনপি জাপা নিষিদ্ধের বিপক্ষে মত দেয়। এ ছাড়া জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ জাপাসহ ১৪ দলের নিষিদ্ধের দাবি জানায়। টিভি টকশোতে ও বিভিন্ন সভা-সেমিনারেও এই চাপ অব্যাহত থাকে। গতকালও নুরুল হক নূরসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর পল্টন মোড় অবরোধ করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। 

অন্যদিকে জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আগামী নির্বাচন নিয়ে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সকালে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে দলীয় মতবিনিময় সভায় এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ৩০০ আসনেই যোগ্য প্রার্থী অন্বেষণে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করে নতুন কমিটির কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার অপেক্ষায় তারা। এ ছাড়া এইচএম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার জন্য লড়াই করছে। 

জুলাই মাসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলারকে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের। মহাসচিব করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। আগস্টে বহিষ্কৃতরা কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। তারা মূল জাতীয় পার্টি হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের ভাষ্য, শিগগির নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে কাকরাইল অফিসে যাব।

ঘরে-বাইরে যখন চাপ এমন, বাস্তবতায় জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতাদের আরও বেশি সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। অন্যান্য সময় পার্টি অফিসে শুধুমাত্র বিকালে কিছু নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকেন। তবে ৩০ তারিখের পর থেকে নেতাকর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে। 

এতসব চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় পার্টি একটি গণতান্ত্রিক দল। জাতীয় পার্টির নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে, নেতাকর্মী আছে। একটি দলকে ব্যান্ড করে দেওয়ার দাবি তখনই ওঠে, যখন তার রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকে। তবে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ তুলতে পারেনি। তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ^াস সরকার সেই ফাঁদে পা দেবে না। 

জুলাই অভ্যুত্থানে পরাস্ত আওয়ামী লীগের ‘এক পাক্ষিক’ চারটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই নির্বাচলগুলোকে বৈধতা দেওয়ার অপরাধে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এর জবাবে শামীম হায়দার বলেন, বিগত সময়ে অর্থাৎ ২০১৮ সালে আমরা দেখেছি বিএনপি অংশ নিয়েছে। ১৪ সাল থেকে ২০ পর্যন্ত অসংখ্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে। ভোটে তো শুধু জাতীয় পার্টি নয়, অন্যরাও করেছে। 

নিজের বাসায় জিএম কাদের : গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, জিএম কাদেরের উত্তরার বাসার দেয়ালে ‘পাবলিক টয়লেট’ ‘স্বৈরাচারের দোসর’, ইত্যাদি লেখাগুলো সাদা রঙ দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। বাসার সামনে দেখা মেলেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। আগের মতো বাসায় আসা-যাওয়া করছেন নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ির মূল ফটকের একাংশ খোলা থাকতে দেখা যায়। এ সময় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন জিএম কাদের। বাড়ির কাজের লোকজন জানান, জিএম কাদের আগের মতোই দলীয় কার্যক্রমে যুক্ত আছেন।

বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী গাজীপুরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। এ সময় বাইরে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জাপার মীর আবদুস সবুর আসুদকে কিছু নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে আসেন জিএম কাদের। রাত ৯টা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সেখানে অবস্ করতে দেখা যায়। এর আগেও টানা তিন দিন তিনি অফিসে এসে কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন


Link copied