বিশেষ প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে এক শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করছে বড় মেয়ে। জীবিত বিধবা মায়ের সাথে জালিয়াতি করে দীর্ঘ দিন ধরে তাদের বড় মেয়ে আরজিনা বেগম এই ভাতা উত্তোলন করে আসছে। এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছে শহিদ বীরমুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী বুলবুলি খাতুন। ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ায় এলাকায় তোলপাড় সৃস্টি করেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার(২৯ আগষ্ট) এ বিষয়ে জানা যায়, উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদখানা আলুপাড়া গ্রামের মৃত আয়েন উদ্দিনের ছেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলী। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করে রনাঙ্গনে শহিদ হন। তার বেসামরিক গেজেট নম্বর ১৭৩, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ৩১৫০৩০০৩৯। মৃতকালে তিনি স্ত্রী বুলবুলি খাতুন ও আরজিনা ও আরফিনা বেগম নামের দুটি মেয়ে রেখে যান। মেয়ে দুইজনের বিয়ে হয়েছে। তারা স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার করছে।
সুত্র মতে বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে প্রতি মাসে ভাতা চালু করলে শহিদ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী বুলবুলি খাতুন (৭০) ভাতার তালিকায় অন্তভুক্ত হন। সাধারন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার ও বর্ধিত ভাতা হিসাবে বর্তমানে ২০ হাজার টাকা করে প্রতিমাসে তিনি সোনালী ব্যাংক কিশোরীগঞ্জ শাখা নীলফামারী থেকে উত্তোলন করে আসছিলেন। যার হিসাব নম্বর ৫৩০৭৪০১০২৩৪৭৩ । শহিদ এই মুক্তিযোদ্ধার বড় মেয়ে আরজিনা(৫৩) ও তার জামাই ইনছান আলী থাকেন কিশোরীগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের উত্তর কালিকাপুর গ্রামে। অপর দিকে শহিদ মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী বুলবুলি খাতুন বসবাস করছেন তার স্বামীর বসতভিটায়।
এ অবস্থায় বুলবুলি বিধবা বড় মেয়ে আরজিনা বেগম ও তার স্বামী ইনছান আলী এই শহিদ মুক্তিযোদ্ধা বাবার ভাতা হাতিয়ে নিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মা বুলবুলি বিধবা মৃত দেখায়। এরপর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ওই ভাতার কাগজ হয় আরজিনার নামে। এরপর থেকে আরজিনা অগ্রনী ব্যাংক নীলফামারী শাখা থেকে প্রতিমাসে ৩০ হাজার করে টাকা নিয়মিত উত্তোলন করে আসছেন। যাহার হিসাব নম্বর ০২০০০১৮২১১৮৯৬। এ পর্যন্ত আরজিনা তার স্বামী ইনছান আলী সহ ওই ব্যাংক থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার ঋণগ্রহন সহ ভাতার ৩৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
এ ব্যাপারে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলীর বিধবা স্ত্রী বুলবুলি খাতুন বলেন, আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকসেনাদের গুলিতে শহিদ হয়। ভাতার ন্যায্য দাবিদার আমি। অথচ আমার বড় মেয়ে ও জামাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে মৃত দেখিয়ে কাগজপত্র জালিয়াতি করে ভাতা উত্তোলন করে ভোগ করছে। আমি অভিযোগ দিতে গেলে কিশোরীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক উল্টো আমার ভাতা বন্ধ করে দিয়ে আমার বড় মেয়ের নামে ভাতা চালু রেখেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে বুলবুলি খাতুন বড় মেয়ে আরজিনা বেগমের সাথে সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি অকপটে ঘটনার বিষয় স্বীকার করে বলেন, কিশোরীগঞ্জ উপজেলার জনৈক এক ব্যাক্তি আমার কাছে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে এ ধরনের জালিয়াতি কাজ করে দিয়েছেন এবং ভাতা উত্তোলনের পর প্রতিমাসে ওই ব্যাক্তি ভাতার একটি অংশ নিয়ে থাকেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন আপনারা যদি পারেন আমার ভাতাটি বন্ধ করে দেন। আমি আর এ ভাতা নিতে চাইনা। আমার মাকে এই ভাতা প্রদান করা হউক।
এ ব্যাপারে কিশোরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহবায়ক নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, এমন অভিযোগ পেয়ে উপজেলার সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক শরীফ হাসানকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রির্পোট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।