আর্কাইভ  বুধবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৫ ● ২১ কার্তিক ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৫
তিস্তা ব্যারেজ থেকে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

তিস্তা ব্যারেজ থেকে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

৭ পদক্ষেপেই বদলে ফেলুন ‘ব্যর্থতা’র গল্প

৭ পদক্ষেপেই বদলে ফেলুন ‘ব্যর্থতা’র গল্প

আলু এখন কৃষকের বোঝা

আলু এখন কৃষকের বোঝা

সাক্ষী না আসায় ফের পেছাল আবু সাঈদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

সাক্ষী না আসায় ফের পেছাল আবু সাঈদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

যেভাবে প্রার্থী বাছাই হলো বিএনপি’র

বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ০৯:৩৯

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: দলীয় প্রার্থীর নাম জানতে সারা দেশের নেতাকর্মীরা মুখিয়ে ছিলেন। ছিল নানা শঙ্কাও। দলের একক প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান তা নিয়ে দলের হাইকমান্ডও চিন্তিত ছিলেন। এ কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে নেয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয় প্রার্থীদের তথ্য। পাঁচ স্তরের বাছাইয়ের পর প্রাথমিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়। এ কারণে প্রার্থী ঘোষণা করার পরও বড় কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি তৃণমূলে। দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া প্রার্থীদের নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। নেতিবাচক তথ্য পাওয়ায় মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী স্থগিত করা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে। চট্টগ্রামে বঞ্চিত এক প্রার্থীর পক্ষে বিক্ষোভ করায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে চারজনকে। 

ওদিকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপি’র তৃণমূলে এখন নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে। উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। দল ঘোষিত প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। প্রার্থীরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন নিজ নিজ এলাকায়।

দলীয় সূত্র জানায়, পাঁচটি জরিপের মধ্যদিয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এই জরিপ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। যাচাই-বাছাই করা হয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের যোগ্যতা, নির্বাচনী এলাকা ও ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, আন্দোলন-সংগ্রামের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়। প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তাদের পাঠানো তথ্য দলের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে বেলা সাড়ে ১২টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান। টানা সাড়ে ৩ ঘণ্টা বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বিএনপি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পাঁচটি জরিপ করেছে বিএনপি। দলীয় চেইন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ভিন্ন মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে একটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে জরিপ হয়েছে। জরিপ চলাকালীন সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান।

ওদিকে তালিকা ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূলে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। দেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে ভোটের আবহ। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী, সমর্থকরা মিছিল-সমাবেশ করছেন। প্রার্থীরাও ছুটছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। যদিও তালিকা ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক আবার কোথাও কোথাও মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি’র মতো বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলে এটাকে স্বাভাবিকভাবে মনে করছেন শীর্ষ নেতারা।

তাদের ভাষ্য, বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। এই দলে একটি আসনে ৪ থেকে ৫ জন কিংবা আরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর মনোনয়নবঞ্চিত নেতার সমর্থকরা প্রতিক্রিয়াও দেখাবে সেটাই হয়েছে। কিন্তু এবার এমন ঘটনা খুবই কম। বরং দলের প্রার্থী ঘোষণার পর অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের স্বাগত জানিয়েছেন। পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। 

প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, দলের ত্যাগী, যোগ্য ও আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয়েই এবার প্রার্থী তালিকা দেয়া হয়েছে। এ কারণে তিন-চারটি আসন ছাড়া তালিকা নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। ইতিমধ্যে মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত কামাল জামান মোল্লার নাম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। 
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যারা দলীয় মনোনয়ন পায়নি, দল তাদের যথাযথ দায়িত্ব ও সম্মান দেবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যারা মনোনয়ন পায়নি, তাদের সম্মান ও মূল্যায়ন করা হবে। তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সেটা ভবিষ্যত সময় বলে দেবে। 

দীর্ঘদিন পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণার পর অন্য রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থী ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। বলছেন, বিএনপি এক আসনে একাধিক প্রার্থী ছিল। এ কারণে ভোটারদের কাছে গেলে তারা বলতেন- ধানের শীষের প্রার্থী কে? এখন আর এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বিএনপি’র কর্মী ও সমর্থকদের।

ভোলা-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর তৃণমূলের নেতা কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার ভোটারসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবাই এখন উচ্ছ্বসিত। এখন আরও বেশি তারা উজ্জীবিত হবে। আর জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে এবং নির্বাচিত হলে ভোলায় নদী ভাঙনসহ এলাকায় উন্নয়ন করবো।  

বরিশাল-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি’র এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জীবিত। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভেতরে স্বস্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এখন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে এবং বিজয়ী করে নিয়ে আসতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বিএনপিসহ ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন অনেক উজ্জীবিত। ইতিমধ্যে কেন্দ্রে থেকে ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব জায়গায় উৎসবমুখর আবহাওয়া লক্ষ্যে করা গেছে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুনেছি, দুই-একটি জায়গায় পছন্দের নেতা মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের কর্মী ও সমর্থকরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এ ছাড়া দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর সব সারা দেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন অনেক বেশি উজ্জীবিত। খবর-মানবজমিন

মন্তব্য করুন


Link copied