নিউজ ডেস্ক: রংপুর জেলার বন্যাকবলিত গঙ্গাচড়া উপজেলার ৩৪টি গ্রাম পানিবন্দি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রায় বিশ হাজার পরিবার।
সোমবার (৬ অক্টোবর) চরাঞ্চলের গ্রামগুলো সরেজমিন ঘুরে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগের দুর্দশা দেখা গেছে। দুর্গত এলাকায় রান্না করা খাবারের তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। রান্না করার উপকরণ ও আগুন জ্বালানোর কোনো জায়গা না থাকায় দুর্গত পরিবারগুলোর বেশিরভাগ ঘরে রোববার রাত থেকে মেলেনি খাবার ।
এছাড়া হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই সব পরিবারের বয়স্ক ও শিশু সদস্যরা।
এদিকে টিউবওয়েলগুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যাভাবে দুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে পানিবাহিত রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
নদীর পানি কমতে শুরু করলেও চরের গ্রামগুলো পানিতে ডুবে থাকায় দুর্গত এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলো এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি। তারা অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থান ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
গ্রামের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকার প্রায় ২০ লাখ টাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ফসলি জমিতে পানি জমে থাকলে চলতি মৌসুমের ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবেন তিস্তা পাড়ের কৃষক পরিবারগুলো।
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। যেদিকে চোখ যায় দেখা মেলে কেবল পানিতে ডুবে থাকা বাড়িঘর আর ফসলি জমির।
দেখা গেছে, অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে গৃহপালিত হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুসহ উচু সড়কে ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
অকাল বন্যায় উপজেলার গঙ্গাচড়া, লক্ষিটারী, গজঘণ্টা, মর্নেয়া, নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ৪ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি।
গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) মাহফুজার রহমান দুলু জানান, তার ইউনিয়নের গান্নারপাড়, বোল্লারপাড়, ধামুর এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আরও পানিবন্দি পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
লক্ষিটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী জানান, ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, মধ্য ইচলি, পূর্ব ইচলি, জয়রাম ওঝা, শংকরদহ ও চল্লিশ সাল এলাকার প্রায় ৩ হাজার পানিবন্দি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। বাকিদের তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছে।
গজঘণ্টা ইউপি চেয়ারম্যান (প্যানেল) বকুল মিয়া বলেন, ইউনিয়নের কালির চর, চর ছালাপাক ও চর রাজবল্লভ এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান (প্যানেল) শরিফুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের বিনবিনা, শখের বাজার, খলাইর চর, মটুকপুর, আবুলিয়া, চিলাখাল এলাকার প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মর্নেয়া ইউপি প্রশাসক মাহমুদুর রহমান জানান, ইউনিয়নের চর মর্নেয়া, নরসিংহ, রামদেব, কামদেব, নিলারপাড়া এলাকার প্রায় ১ হাজার পানিবন্দি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আরও কেউ পানিবন্দি আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে।
নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, ইউনিয়নের চর নোহালী, চর বাগডহরা, চর বৈরাতি, মিনার বাজার, ব্রিফ বাজার ও আশ্রয়ণ বাজার এলাকার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আলমবিদিতর ইউপি প্রশাসক আবতাবুজ্জামান জানান, ইউনিয়নের পাইকান হাজীপাড়া ও ব্যাঙপাড়া এলাকার প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ফসলি জমি, বাড়িঘর, মাছ চাষের পুকুর, রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, সাম্প্রতিক অকাল বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেখানে যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন সেখানে সেভাবে ত্রাণ তৎপরতার জন্য কাজ চলছে। দুর্গতদের তালিকা করছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।