আর্কাইভ  সোমবার ● ২০ মে ২০২৪ ● ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
আর্কাইভ   সোমবার ● ২০ মে ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিন সদস্যের সাজা প্রদান       চলতি বছরই বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে চলবে ট্রেন       দিনাজপুর মেডিকেলে আটক ২১ দালালের নেপথ্যে শক্তিশালী সিণ্ডিকেট        পুড়ে ছাই রাইসির হেলিকপ্টার, কারও বেঁচে থাকার চিহ্ন নেই       ভারতে পাঁচারের উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা কষ্টি পাথরের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১       

 width=
 

রংপুরের পাগলাপীর শলেয়াশাহ গ্রামে হিন্দু বাড়িতে হামলার নেপথ্যে

শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৭, রাত ০৮:২৬

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরপাড়ার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায় ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ ছবিযুক্ত একটি স্ট্যাটাস দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৯ অক্টোবর ওই এলাকার লালচাঁদপুর গ্রামের মুদি দোকানি আলমগীর হোসেন অভিযুক্ত হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ওই যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে গত ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার এলাকাবাসী বিক্ষোভও করে। টিটু রায়ের ওই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ আসামিকে ধরা হবে বলে কথা দেয়। টিটু রায় থাকেন নারায়ণগঞ্জে, তিনি একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, ঠাকুরপাড়ার টিটু রায় নামের এক যুবক ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ ছবিসহ একটি পোস্ট করেন অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০ নভেম্বর শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই এলাকায় ৩টার মধ্যেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ওসি জিন্নাত আলী আরও বলেন, দুপুর দুইটার দিকে খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়াশাহ ও বালাবাড়ি গ্রাম এবং পাশের মমিনপুর গ্রামসহ বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা এলাকা থেকে জুম্মার নামাজের পর দলে দলে তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ ও শিশুরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সময় বাড়ার সাথে সাথে ৮ থেকে ১০ হাজার লোকের সমাগম থেকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারী টিুট রায়ের বাড়ির দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট ও লাঠি ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক দফায় ছররা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সংঘর্ষ চলাকালেই হামলাকারীদের একটি বড় অংশ নায়েরে তাকবীর আল্লাহু আকবার স্লোগান দিতে দিতে ঠাকুরপাড়া গ্রামে ঢুকে ধীরেন রায়ের গোডাউনসহ আশপাশের কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে। এতে শলেয়াশাহ এলাকার একরামুল হকের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব (২৭) নিহত হন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। আহতদের মধ্যে ১১ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখ বলেন, যার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেই টিটু রায়ের বাড়ি গঙ্গাচড়ার ঠাকুরটারি গ্রামে হলেও তিনি সেখানে থাকেন না। নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে।

টিটু রায়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে দেয়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগটি আসলেই সত্য কিনা এমন প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, ‘সেই তদন্তের সুযোগ তো আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা মামলা নিয়েছি। এখনো তদন্ত চলছে। আসামিকে গ্রেফতারের জন্য নারায়ণগঞ্জে লোক পাঠানো হয়েছে। তাকে ধরা গেলে, ফেসবুক বিশ্লেষণ করলে তার পর বিস্তারিত জানা যাবে’।

স্থানীয় পাগলাপীর জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে পাগলাপীর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশে কয়েকশ মানুষ ছিলেন। বিক্ষোভের পর টিটু রায়কে গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে তাকে গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরেও অভিযুক্ত টিটু গ্রেফতার না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে শুক্রবার দুপুরে আবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় বিক্ষুদ্ধ মুসল্লিরা।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের গ্রামে হামলার ঘটনা বেড়েছে। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে এক বৌদ্ধপল্লীতে একই অভিযোগ তুলে হামলা চালিযয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অনেকটা একই কায়দায় একটি হিন্দুপল্লীতে হামলা চালানো হয়েছিল।

মন্তব্য করুন


 

Link copied