আর্কাইভ  রবিবার ● ৫ অক্টোবর ২০২৫ ● ২০ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ৫ অক্টোবর ২০২৫
দুর্নীতি মামলায় খালাস পেলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

দুর্নীতি মামলায় খালাস পেলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান কত

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান কত

৮ আসামির বিরুদ্ধে নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

চানখারপুলে ৬ হত্যা
৮ আসামির বিরুদ্ধে নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু শিগগিরই

চিফ প্রসিকিউটর
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু শিগগিরই

মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আসবে?

আমেরিকায় চাঞ্চল্যকর ঘটনা ! আরাকান বাংলাদেশে যুক্ত হচ্ছে ?

রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫, রাত ০১:৪৩

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  ঢাকার আকাশে এক অদ্ভুত নীরবতা। শহরের আলোম্লান কিন্তু প্রতিরক্ষা দপ্তরের স্যাটেলাইট কন্সলে জলজল করছে একবিন্দু আলো। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি মার্কিন নৌজাহাজের অবস্থান। সরকার বলছে এটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা সূত্র জানায় মহরার প্রকৃত উদ্দেশ্য মানবিক নয়। এটি কৌশলগত অবস্থা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি। ২০১৯ সালে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ব্র্যাড শেরম্যান বলেছিলেন যে দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সেই বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইন যুক্ত করাই যৌক্তিক। তখন কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু ছয় বছর পর সেই বক্তব্য যেন বাস্তব রাজনীতির রাডারে ফিরে এসেছে নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন উদ্দেশ্যে। ২০১৯ সালের ২৮ জুনের সেই শুনানিী ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের এক নীরব ভূমিকম্প। মার্কিন প্রশাসন সরাসরি রাখাইন সংযুক্তির ধারণা উত্থাপন করেছিল যা একদিকে মানবিক সংকটের সমাধান।

 

অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে দেওয়ার সূচনা। দীর্ঘ সময় এই বক্তব্যকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন উপস্থিতি সেই ধারণাকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। রাখাইনের যুদ্ধ, আরাকান আর্মির উত্থান, চীনের উদ্বেগ, ভারতের অস্বস্তি সব মিলিয়ে এটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম উপকূলে অনুষ্ঠিত মানবিক সহায়তা অনুশীলনকে ঘিরে এখন দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মহল সরপ। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে এটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অংশ। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো একে দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। ভারতের প্রধান ধারার পত্রিকা দ্যা হিন্দু এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া উভয় লিখেছে চট্টগ্রামে মার্কিন উপস্থিতি কেবল মানবিক নয়। এটি বঙ্গোপসাগরে আমেরিকার সামরিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের অংশ। ভারতীয় বিশ্লেষকদের ভাষায় এই মহরা আসলে সফট মিলিটারি এক্সপ্যানশন যা বাংলাদেশকে অজান্তে নতুন এক জিও স্ট্রাটেজিক খেলায় টেনে নিচ্ছে।

 

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মহলে আশঙ্কা চট্টগ্রাম বন্দরে মার্কিন উপস্থিতি স্থায়ী হলে তা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষত ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্তেরকৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট করবে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে দিল্লি উদ্বিগ্ন চট্টগ্রাম হয়ে মার্কিন সাপ্লাই চেইন করিডর গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নিয়ে যা একসময় ভারতীয় উত্তর-পূর্বে গোয়েন্দা তৎপরতার সুযোগ করে দিতে পারে। কিছু ভারতীয় বিশ্লেষক আরো এগিয়ে বলেছেন, এই মহরার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দোপ্যাসিফিক কমান্ড ইন্দোপ্যাকম নেটওয়ার্কের এক্সটেনশন তৈরি করছে যেখানে বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে এক ফরোয়ার্ড অপারেটিং নোড। এই তত্ত্ব ভারতের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যেও তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি সম্পূর্ণরূপে মানবিক উদ্যোগ। ঝড়, বন্যা ও ভূমিকম্পের মত দুর্যোগের সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ। তবে কৌশলগতভাবে মহরার প্রকৃত প্রভাব অনেক গভীর। রাখাইন এখন ভৌগোলিক সংঘাতের কেন্দ্র। আরাকান আর্মি জানতা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ভেঙে অর্ধেক অঞ্চল দখলে রেখেছে।

 

এই সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে একটি হিউম্যানিটারিয়ান জোন ঘোষণার যার নেতৃত্বে থাকবে বাংলাদেশ। এই প্রক্রিয়া কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি নতুন কৌশলগত ফ্রন্ট খুলতে পারবে। এতে চীনের সমুদ্রপথে প্রবেশাধিকার এবং ভারতের পূর্ব সীমান্ত উভয়েই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। রাখাইন তাই এখন শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু নয় এটি হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার পরবর্তী ক্ষমতার প্রতীক।  ঢাকা এখন এক কূটনৈতিক তোলা চলে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আঞ্চলিক মানবিক নেতৃত্বে দেখতে চায়। কিন্তু সেই অবস্থান গ্রহণ মানে ভারত ও চীনের সরাসরি অস্বস্তি তৈরি। দিল্লি আশঙ্কা করছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে মার্কিন প্রভাব স্থায়ী হলে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল কৌশলগতভাবে ঘেরাও হয়ে যাবে। ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল এখন দ্বিধাগ্রস্ত। একদিকে চীনের মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র থাকা বাধ্যতামূলক অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি সক্রিয়তা ভারতের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করছে। বাংলাদেশও জানে এই সমীকরণে সামান্য ভুল মানে বড় বিপর্যয়।

 

তাই নীরব কূটনীতি, ভারসাম্যের কৌশল এবং সময়ক্ষেপণই এখন প্রধান হাতিয়ার। ভূরাজনীতিতে কখনো রাতারাতি কিছু ঘটে না।আজ যে ঘটনাগুলো দৃশ্যমান সেগুলোর শেকর হয়তো এক দশক বা তারও বেশি সময় আগে রোপণ করা হয়েছিল। ডিপ স্টেট বা রাষ্ট্রের গভীর কৌশলগত কাঠামো এমনভাবে পরিকল্পনা তৈরি করে যার বাস্তবায়ন ধীরে ধীরে একটি মহড়া একটি চুক্তি বা একটি সীমান্ত সংঘাতের মধ্য দিয়ে ঘটে আর এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর গতি সবসময় নীরব কিন্তু নির্ভুল রাখাইনিশিতেও সেটাই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র চীন ভারত প্রত্যেকেই জানে যে মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্ত এখন শুধু একটি মানবিক সংকট নয় বরং একটি স্ট্রাটেজিক করিডর বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকের প্রবেশপথে যেই নিয়ন্ত্রণ নেবে সেই দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ও জ্বালানি পথের উপর প্রভাব বিস্তার করবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মহরা, প্রতিটি রাজনৈতিক বিবৃতি এমনকি প্রতিটি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সবই এই বৃহত্তর নীল নকশার অংশ।

 

২০১০ সালে যেমন সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতনের রূপরেখা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের আগুন জ্বলেছিল এক বছর পর, তেমনি রাখাইন প্রসঙ্গে আজ যা কূটনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে তা হয়তো বাস্তবে রূপ নেবে এক দশক পর। এই ধীর কৌশলগত অগ্রযাত্রায় ভূরাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। যদি আরকান আর্মি রাখাইনের প্রভাব বাড়াতে থাকে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবিক করিডরের নামে সেখানে সামরিক উপস্থিতি স্থায়ী করে তাহলে বাংলাদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই অঞ্চলের কেন্দ্রীয় খেলোয়াড় হয়ে উঠবে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই কেন্দ্রীয় অবস্থান কি স্বাধীনতার প্রতি নাকি নতুন নির্ভরতার জাল এই মুহূর্তে যা দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামে মার্কিন কার্যক্রম বঙ্গোপসাগরের নৌ পর্যবেক্ষণ রাখাইন সীমান্তে আরাকান বাহিনীর অগ্রগতি সবই যেন এক অদৃশ্য সুতোইয় বাঁধা ইতিহাস বলে এ ধরনের সুতা একদিন হয় মানচিত্র বদলায় নয়তো নতুন যুদ্ধের সূচনা করে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান তাই এখন এক দ্বৈত বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে যেখানে সুযোগ আছে আবার বিপদ লুকিয়ে রাখাইন চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগর এই ত্রিভুজ যেন ভবিষ্যতের দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে সময় ধীরে ধীরে তার নকশা মিলছে শুধু প্রশ্ন আমরা কি তা বুঝতে পারছি  চট্টগ্রামের রাডারে আবার দেখা যায় মার্কিন কার্গো বিমান বঙ্গোপসাগরের ঢেউথেমে আছে কিন্তু তার নিচে ঘূর্ণায়মান এক অদৃশ্য পরিকল্পনা।

 

রাখাইন সীমান্তে আরাকান আর্মির পতাকা উঠছে আর ওয়াশিংটনের মানচিত্রে নতুন রেখা টানা হচ্ছে। ঢাকা নীরব দিল্লি অস্বস্তিতে আর সময় ধীরে ধীরে সাজিয়ে নিচ্ছে তার কৌশল। প্রশ্ন একটাই। এই পরিকল্পনার শেষ প্রান্তে কি বাংলাদেশের মানচিত্র বদলে যাবে? সমুদ্র যেমন সময়ের সাথে বালুকাবেলার আকৃতি পাল্টায় তেমনি ইতিহাসও বদলায় পরিকল্পনার গহীনে।

মন্তব্য করুন


Link copied