আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন সম্পন্ন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা      

 width=
 

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন, লাভ-ক্ষতি কার?

সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২, সকাল ০৯:১০

মাহমুদ হাসান

আজকাল অনেক রাজনীতিবিদ আর সমাজপতিই যেন নির্বাচনকে আর ভালো চোখে দেখেন না। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে, জনপ্রতিনিধি হওয়ার খায়েশে মূহ্যমান সমাজপতিরা মনোনয়নপত্র কমিশনে জমা দেবেন, নির্ধারিত তারিখে সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষটি ছাড়া অন্যরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। 

তাতেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়। জনগণের দুয়ারে দুয়ারে-দুয়ারে ধরনা দেওয়া কার ভালো লাগে বলুন? তা না করে, ক্ষমতাবানদের বিপরীতে যখন কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যান, তখনই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। যে কোন মূল্যে জয়ী হওয়ার নেশায় গণতন্ত্রের রীতিনীতি সব উল্টো হয়ে যায়। মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে জেলা পরিষদের নির্বাচন, এমন খায়েশকে যেন আরও বড় বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। 

জেনারেল জিয়ার 'হ্যাঁ, না' ভোটের নির্বাচন। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। গণতন্ত্র, নির্বাচন এসব তখনো আমার মাথায় নেই। বাড়ির কাছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেমন যেন উৎসব আনন্দের মেলা বসেছে। আমার সহপাঠী ইদ্রিস নাকি সত্তরটি ভোট দিয়েছে। তার চোখে, মুখে আনন্দ। এসব দেখে আমিও এগিয়ে যাই। গ্রাম সম্পর্কের এক চাচা মশাই, আমাকেও কাজে লাগায়। ভাগ্য বিড়ম্বনায়, আমার ভাগে সেদিন বিশটি ভোট জুটেছিল। এভাবেই গনতন্ত্রের সংগে আমার প্রথম মোলাকাত।

১৯৮৬ সালে গণতন্ত্রের সংজ্ঞানুযায়ী, আমি প্রথম ভোটার হই। এরশাদ জমানার প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক, ইউপি চেয়ারম্যান মতলুব উদ্দীন চৌধুরী আর নুরুজ্জামান সাহেবের সাথে চলাফেরার অপরাধে স্বৈরচারের চামচারা আমাকে জীবনের প্রথম গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত করেছিল। ১৯৮৮ সালেও ছাত্রলীগ করার অপরাধে ভোট কেন্দ্রের দখলদার বাহিনী আমাকে কেন্দ্রের কাছেই ভিড়তে দেয়নি। রাজনীতির সজ্জন মানুষ, আলোকিত ব্যক্তিত্ব এনামুল হক মোস্তফা শহীদকে (সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী) ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ঐদিনই আমাকে এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম ফিরতে হয়েছিল। 

ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর। যে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনের স্বীকার করতে হয়েছে, সেই খালেদা জিয়ার আমলেই জাতি ১৫ ফেব্রুয়ারিতে গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক কলঙ্ক দেখেছে। নিরংকুশ ম্যান্ডেট থাকা সত্ত্বেও জবরদস্তির 'মাগুরা' নির্বাচনের কারণে, ক্ষমতার মসনদ থেকে জনগণ বিএনপিকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। যে গণতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর হয়ে কাঞ্চন, দীপালি সাহা, সেলিম, দেলোয়ার, নুর হোসেন, ডাক্তার মিলন, আর জননেতা ময়েজ উদ্দীন রাজপথে জীবন দিয়েছিল, সেই গণতন্ত্র আজ কোথায়? যে সাম্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে, তরুণ ছাত্রসমাজ তাদের জীবন থেকে একটি দীর্ঘ অধ্যায় আন্দোলন সংগ্রামে কাটিয়েছিল, সেই তরুণরা মধ্য বয়সে হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো নিয়ে আহাজারি করছে। 

তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বির মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়ে যায়। গত ১২ অক্টোবর এই শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তার বিপরীতে আরও চারজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। হেভিওয়েট প্রার্থী রিপনের বিপরীতে যারা ছিলেন জনপ্রিয়তায় তাদের কেউই রিপনের সমকক্ষ ছিলেন না। পত্র-পত্রিকার তথ্যমতে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে রিপনের বিজয় সুনিশ্চিত ছিল। গণতন্ত্রের কী নিষ্ঠুরতম পরিহাস, নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, একান্নটি ভোট কেন্দ্রের ব্যাপক অনিয়মের চিত্র এখন সিসিটিভির ফুটেজে। দুর্বৃত্তরা নাকি প্রায় শতাধিক কেন্দ্রের সিসিটিভির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে, কমিশন পুরো নির্বাচনী এলাকার ভোট বাতিলে বাধ্য হয়েছে।

নির্বাচন বাতিলের পর নানামুখী তীব্র প্রতিক্রিয়ায় মিডিয়া এখন সরগরম। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার ও আইনি ক্ষমতা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশন যা চোখে দেখেছেন, তাকে বিশ্বাস করে এসব অনিয়মের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অন্যদিকে একই ভাষায়, সাদা কাগজে কাউকে এড্রেস না করে বিরানব্বই জন প্রিসাইডিং অফিসার সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবি করেছেন। সব অবস্থাদৃষ্টে এটি স্পষ্ট- স্থানীয় প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এখন নির্বাচন কমিশনের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে। সার্চ কমিটি গঠন করে সারা দেশ থেকে বরেণ্য মানুষদের বাছাই করে, তার মধ্য থেকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শ্রেষ্ঠ মানুষদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন কী তাহলে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে জাতির সঙ্গে উপহাস করছে?

তর্কের খাতিরে বলা যায়, সিসিটিভির পর্যবেক্ষণ যদি সত্যি হয়, স্থানীয় প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠে। জনপ্রিয় নেতা মাহমুদ হাসান রিপন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যেখানে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল, সেখানে স্থানীয় প্রশাসন একটি বিতর্কহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলো কেন? তাহলে কি সরিষার মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোনো ভূত, আওয়ামী লীগের জন্য আর একটি 'মাগুরা' তৈরির অভিলাষে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে! স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভূমিকাই বা কি ছিল? জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও, তারা কেন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনকে বাধ্য করতে ব্যর্থ হলো? নাকি তাদের মধ্যেও, বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার জাতীয় খায়েশ জন্ম নিয়েছিল?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল বরেণ্য আমলা। চমকপ্রদ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই মানুষটি যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন, অনেকে জনসমক্ষে স্বীকার না করলেও কমিশন নিয়ে চারিদিকে যে একটি স্বস্তির আবহাওয়া বিরাজমান ছিল, সেটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। গাইবান্ধা উপনির্বাচন নিয়ে কমিশন আর আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থান কী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে জনমনে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে? এ নির্বাচনটি নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের যেসব বক্তব্য গণমাধ্যম এসেছে, যদি তাই সত্যি হয়, তাহলে তো নির্বাচন কমিশন দারুণভাবে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এমনিতেই তো বিরোধীদের মাঝে সংসয় সন্দেহের দোলাচল বিরাজমান। এরই মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন তো অস্থিরতার মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতি কি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে?

পদ্মা সেতুর সুশীতল হাওয়ায় দক্ষিণ বঙ্গসহ সারা বাংলার আনন্দের রেশ এখনো কাটেনি। ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা কলসিন্দুরের তরুণীদের নেতৃত্বে অজপাড়াগাঁয়ের দীনহীন পরিবারের তরুণীরা সাফ জয় করে বাংলার জন্য যে গৌরব এনে দিয়েছেন, সেই আনন্দের রেশ এখনো বহমান। বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মাথায় নিয়েও যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণে গাইবান্ধা-৫ এর নির্বাচনকে বিতর্কিত করার লাভ-ক্ষতি কার, সেটি খতিয়ে দেখার কোনো বিকল্প আছে কি?

লেখক: কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন


 

Link copied