আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ● ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ       এসএসসির সময়সূচি প্রকাশ, পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল       বড়পুকুরিয়া খনির ১৪১৪ ফেইস থেকে উত্তোলিত কয়লা ৪.৮১ লক্ষ টন       রংপুরে অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ       রংপুর জেলা ট্রাক মালিক সমিতির নব নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহন      

 

গুলিবিদ্ধ হওয়ার ১০০ দিন পর মৃত্যু আবদুল্লাহ কষ্ট ঘোচাবে, স্বপ্ন দেখতেন মা-বাবা

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, রাত ০৯:১৮

নিউজ ডেস্ক: হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন এক তরুণ। কপালে ব্যান্ডেজ। নীল কাপড়ে ঢাকা পুরো শরীর। শ্বাসনালিতে খাবার যাওয়ার জন্য নাকের ভেতর নল। এমন একটি ছবি গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরপাক খায়। ছবিটি পোস্ট করে একজন লেখেন, ‘শহীদি মিছিলে যুক্ত হলেন আরও এক শিক্ষার্থী।’ কেউবা লেখেন, ‘আমাদের ভাই, আমাদের আরও এক সহযোদ্ধা  শহীদ হলেন।’ 

ছবির তরুণটি ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ হোসাইন (২৩)। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের খবরে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় সারাদেশে যখন আনন্দ মিছিল চলছে, তখন তিনি গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন। একটি গুলি তাঁর কপালের ঠিক মাঝ বরাবর লাগে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় অস্ত্রোপচার করে বের করা হয় গুলি। আবদুল্লাহ সুস্থ হয়ে উঠবেন– এ আশ্বাস দেন চিকিৎসক। শেষ পর্যন্ত তিনি সুস্থ হননি। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গতকাল ভোরে তিনি মারা গেছেন।

আবদুল্লাহর বাড়ি যশোরের বেনাপোল পৌর শহরের বড় আঁচড়া গ্রামে। তিনি আবদুল জব্বার ও নাজিয়া খাতুন দম্পতির ছোট ছেলে। রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের (সম্মান) ছাত্র ছিলেন আবদুল্লাহ। পড়াশোনা করতেন বোনের বাসায় থেকে। আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি।

স্বজনরা জানান, ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে বংশাল থানার সামনে পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক আশ্বস্ত করেন সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে। দু’দিন পর তাঁকে রিলিজ দিলে তিনি বাসায় চলে যান। তবে বাসায় ফিরে তাঁর মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। এর পর আবার ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান, যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২২ আগস্ট তাঁকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

আবদুল্লাহর মামা ইসরাইল সর্দার বলেন, ‘আমার ভাইবোন হাসপাতালে ছেলেকে দেখাশোনার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকায় ছিলেন। সন্তানকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু ফিরছেন লাশ নিয়ে। তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিল সবার ছোট। আমার দুলাভাই দিনমজুর। ঘাম ঝরানো সামান্য রোজগারে ছেলেকে ঢাকায় পড়াচ্ছিলেন। আশা ছিল, ছেলে উচ্চশিক্ষা শেষে ভালো চাকরি করে পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাবে। কিন্তু তা আর হলো না।’

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর নিজ কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ও সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আবদুল্লাহর জানাজা হয়। তারপর মরদেহ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেন স্বজনরা। আজ শুক্রবার বেনাপোল ফুটবল মাঠে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জানাজার আগে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবদুল্লাহর বড় ভাই মো. জাহাঙ্গীর। তিনি আহাজারি করে বলেন, ‘তুই আমাদের ছেড়ে গেলি, ভাই! তোকে এভাবে হারাব– আমি কল্পনাও করিনি!’

সরকার চিকিৎসায় গুরুত্ব দেয়নি– এমন অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সরকার থেকে বলা হলো, কাগজ জমা দেন; তাকে বিদেশ নেওয়া হবে। কিন্তু তার আর গতি ছিল না। আমার ভাই তিলে তিলে মারা গেল। বিদেশে নেওয়ার জন্য সরকারের বড় অবহেলা ছিল। তাকে বিদেশে নেওয়া হয়নি; উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। সরকার আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় গুরুত্ব দেয়নি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, আপনারা জালিমের প্রতি উদারতা দেখাচ্ছেন, শহীদদের সঙ্গে প্রহসন করছেন।’

জানাজায় অংশ নেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আল সাদিক কাইয়ুম, জবি শিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার, আবদুল্লাহর সহপাঠীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

আবদুল্লাহর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে জড়ো হন স্বজন-প্রতিবেশীসহ গ্রামের লোকজন। তাঁর স্কুলশিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, অভাবী পরিবার থেকে অনেক কষ্টে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ছেলেটি ঢাকায় গিয়েছিল। তাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। তার আগেই আবদুল্লাহ চলে গেল! আগামী রোববার বেনাপোলের সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরে তার জন্য দোয়া অনুষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শোক দিবস পালন করবে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, বেনাপোল বন্দর পরিদর্শনে আসা নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বিকেলে আবদুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে স্বজনকে সান্ত্বনা দেন। এ সময় আবদুল্লাহর মামা ইসরাইল সর্দার ও বড় ভাই মিঠুর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা তাঁর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। বেনাপোল পৌরসভার পক্ষ থেকে ২৫ হাজার ও জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার টাকা তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেন সাখাওয়াত হোসেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied