নিজস্ব প্রতিবেদক, মমিনুল ইসলাম রিপন, রংপুর।। জুলাই গণঅভুত্থান ও আওয়ামীলীগ সরকারের পতন পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় হত্যা ও হত্যা চেষ্টাসহ এক বছরে মেট্রোপলিটন থানাসহ রংপুরের ৫ থানায় ৪০ টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার । এরমধ্যে জেল হাজতে রয়েছে প্রায় ২ শতাধিক ।
আদালত ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছর জুলাই গণঅভুত্থানের পর পতন ঘটে আওয়ামীলীগ সরকারের। এরপর ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের সময় রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় হত্যা ও হত্যা চেষ্টাসহ এক বছরে ৪০ টি মামলা হয়েছে। এই ৪০ টি মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার জন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, সাবেক স্পীকার, পুলিশের সাবেক আইজিপি, তৎকালীন, রংপুরের বিভিন্ন পদে থাকা পুলিশ, , আইনজীবীসহ আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় জেল হাজতে রয়েছে দুই শতাধিক। অনেকেই জামিনে রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী হওয়া ৪০ টি মামলার মধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে ৯ টি, হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে ২৮ টি। এছাড়াও জাতীয় পার্টি ও এনসিপির বিরোধে উভয়ে একটি করে মামলা দায়ের করেছেন। আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন জিয়া পরিষদ। এই মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায়। এই থানায় হত্যা ও হত্যা চেষ্টায় মামলা হয়েছে ২৪ টি। এছাড়াও রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় মামলা হয়েছে ৬ টি এবং হাজিরহাট থানা মামলা হয়েছে ২ টি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ৪০ টি মামলার মধ্যে শুধুমাত্র শহিদ আবু সাঈদের মামলা বাদে প্রতিটি মামলা থেকে ১০ থেকে ৫০ জনকে এফিডেভিট করে আসামির নাম বাদ দিয়েছে মামলার বাদী।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন পুলিশের পক্ষ থেকে অন্যটি করেছেন তার পরিবারের পক্ষ থেকে। দুটি মামলায় হয়েছে তাজহাট থানায়। আবু সাঈদ নিহতের ঘটনা পর ১৭ জুলাই রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা হয়। বাদী তাজহাট থানার (বেরোবি) পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই বিভূতি ভূষণ রায়। পেনাল কোডের (১৪৩/১৮/৬/৩৩২/ ৩৩৩/৩৫৩/৩৭৯/৪৩৫/ ৪২৭/৩০২/৩৪) ধারায়। মামলার বিবরণে উল্লেখ রয়েছে, বেআইনি জনতা সাধারণ/মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করে গুরুতর জখম, চুরি, ভাঙচুর, ক্ষতিসাধন, অগ্নিসংযোগ ও নিরীহ ছাত্রকে হত্যা করে অপরাধ করা হয়েছে। আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও এতে বলা হয়, এরা উচ্ছৃঙ্খল ২-৩ হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্ত। তাদের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির সমর্থিত নেতাকর্মীও রয়েছে। পুলিশের এই প্রতিবেদনে মামলাকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও আবু সাঈদের পরিবার।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় আওয়ামী সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুরের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের এএসআই সৈয়দ আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।