স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারীর চিলাহাটিতে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি চালু করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে রেলভবনের ঠিকাদার কর্তৃক হস্তান্তর ও কার্যক্রম অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফিতা কেটে ভবনটির উদ্ধোধন করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার লিয়াকত শরীফ খান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিভিশনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার হাসিনা খাতুন, ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার গৌতম কুমার কুন্ডু এবং ট্রাফিক ইনস্পেক্টর হাবিবুর রহমানসহ রেলওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা।
এছাড়া উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রকল্প পরিচালক পশ্চিমাঞ্চল রেলের ডিএমটু আব্দুর রহীম জানান, রেললাইন ও লুপ লাইন স্থাপন সহ পুরো চিলাহাটি রেলস্টেশনকে দৃস্টিনন্দন ভাবে গড়ে তুলতে দুই ধাপে দুইশত ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। চিলাহাটির এই আধুনিক দৃস্টিনন্দন রেলস্টেশন ভবনে অভ্যন্তরীণ ট্রেন চলাচলের জন্য স্টেশন অফিস চালু হওয়ায় স্থানীয় জনগণ আনন্দিত। এখানে রেল যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্টেশন চত্বরে বসানো হয়েছে ১৭টি সিসি ক্যামেরা। এর মধ্যে ১৪টি কাস্টমসের আওতায় এবং তিনটি রেল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।
নতুন করে চালু হওয়া চিলাহাটি নান্দনিক স্টেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, আধুনিক টিকিট কাউন্টার, যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা এবং পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্ন সৌচাগার (টয়লেট) রয়েছে। সেই সাথে ভবিষ্যতে এখানে যুক্ত হবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, মানি এক্সচেঞ্জ অফিস, ফাস্টফুড দোকান এবং তিনতলা বিশিষ্ট হোটেল, যা ভ্রমণকারীদের বিশ্রাম ও খাবারের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করবে।
প্রকাশ্য যে, চিলাহাটি রেলস্টেশনের রয়েছে একটি গৌরবময় অতীত। ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রেলপথ সংযোগের অংশ হিসেবে চিলাহাটি হয়ে কলকাতা হলদিবাড়ি-দার্জিলিং রুটে রেল চলাচল শুরু হয়। দেশভাগের পরও ট্রেন চলছিল এই পথে। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায় চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুট।
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে আবারও চালু হয় এই রেলপথটি। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রা শুরু করে যাত্রীবাহী ট্রেন ‘মিতালি এক্সপ্রেস’। কিন্তু কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারি পরিপ্রেক্ষিতে, উদ্বোধনের পর থেকে এর বাণিজ্যিক চালানো স্থগিত করা হয়েছিল। এরপর ট্রেনটি ২০২২ সালের ১ জুন যাত্রী নিয়ে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু হয়। ঢাকা-শিলিগুড়ি রুটের এ ট্রেনটি দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। রবিবার ও বুধবার কলকাতার নিউ জলপাইগুঁড়ি রেলস্টেশন থেকে এবং সোমবার ও বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলাচল করে। সাপ্তাহিক দুই দিনের এ ট্রেন চলাচল থাকলেও বর্তমানে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনরায় চালুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পর্যটনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হবে চিলাহাটিতে ইমিগ্রেশন অফিস চালু হলে, যাতে আর ঢাকায় গিয়ে ইমিগ্রেশন করতে না হয়।
অঞ্চলভিত্তিক আমদানি-রপ্তানি, কৃষিপণ্যের বাণিজ্য, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা ও পরিবহন খাতে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হবে এই স্টেশনকে ঘিরে। স্টেশন ভবনটিকে ঘিরে জনসম্পৃক্ততা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা নাগরিক দায়িত্ব বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে এবং খরচ কমাতে চিলাহাটি থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ ব্যবহার করতে আগ্রহ দেখিয়েছে ভুটান। ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর ১৮ জনের এক প্রতিনিধি দল চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি সীমান্তের রেলরুট পরিদর্শন করেছিল।
সেই সাথে ট্রান্স-এশিয়ান নেটওয়ার্ক রেলওয়ে ও বিমান এর অংশ হিসেবে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও চিলাহাটি রেলপথ ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন সরকারও।