ডেস্ক: উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জ্বালানি তেল পেট্রোল ও অকটেনের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেচের সংকটে পড়েছেন কৃষকেরা এবং পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত তেল পাচ্ছেন না গাড়ির মালিক-চালকেরা। সরবরাহ কমার পেছনে ছয়টি কারণ কাজ করেছে। তবে আজকের মধ্যে বিদ্যমান সংকট অনেকটা কমে যাবে এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে তা দূর হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র।
বিপিসি ও তেল বিপণনকারী তিনটি সরকারি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল এবং তেল পাম্পের কয়েক জন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমত উত্তরের দুই জেলা দিনাজপুর ও রংপুরের ডিপোর মাধ্যমে মূলত ঐ অঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে রেল ওয়াগনে করে এই তেল ডিপোগুলোতে পৌঁছায়। ডিপো থেকে তা তেলের পাম্প বা স্টেশনে পৌঁছায়। ঈদের সময় যাত্রী পরিবহনে অগ্রাধিকার দেয় রেল। আর ইঞ্জিন-সংকটের কারণে ডিপোগুলোতে নির্ধারিত সময়ে তেল পৌঁছানো যায়নি। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই এই শিডিউল ভঙ্গ হয়।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন এলাকায় জাহাজের মাধ্যমে তেল পরিবহন করা হয়। ঈদের সময় অনেকগুলো জাহাজ মজুতাগার থেকে তেল নিলেও নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যের ডিপোতে যায়নি।
তৃতীয়ত, ডিপোর কর্মী-শ্রমিকদের বড় অংশ ছুটিতে থাকায় ঈদের ছুটির সময়ে ডিপো এলাকায় যাওয়া ট্রেন কিংবা জাহাজের তেল খালাস করা যায়নি।
চতুর্থত, এবারের ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে ৯ দিনের বন্ধের মধ্যে মাত্র এক দিন অফিস খোলা থাকায় অনেক পাম্প স্টেশন নির্ধারিত সময়ে পে-অর্ডার দিতে পারেনি। এর ফলে তারা নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ তেল পায়নি।
পঞ্চমত, ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবে দূরপাল্লার গাড়ি বেশি চলাচল করে। সরবরাহ কমে যাওয়ার মধ্যেই যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সংকটের ব্যপ্তি বেড়েছে।
ষষ্ঠত, এই সংকটকে আরো গভীর করেছে কিছু পাম্প স্টেশনের মালিক বা কর্মীদের কারসাজি। সরবরাহ ঘাটতির সুযোগে এদের অনেকে পাম্পের তেল বাইরে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন।
এদিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানায়, দেশে প্রতি মাসে পেট্রোল ও অকটেনের গড় চাহিদা যথাক্রমে ৩৯ হাজার ও ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার সবটুকু পেট্রোল দেশেই উত্পাদন করা হয়। অকটেনও চাহিদার প্রায় অর্ধেক দেশীয় উত্স থেকে জোগান দেওয়া হয়। বাকিটুকু বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী তেল বিপিসির মজুতাগারে রয়েছে। অর্থাত্ উত্পাদন ও আমদানি স্বল্পতার কারণে বিদ্যমান সংকট হয়নি। এই সংকট তৈরি হয়েছে মূলত তেল পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে না পারার কারণে।
বিপিসির একজন মহাব্যবস্হাপক জানান, তেলের পাম্পে পেট্রোল-অকটেন পৌঁছানোর যে চ্যালেঞ্জ ছিল, তা প্রায় দূর হয়েছে। সোমবার থেকে পরিস্হিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পরিস্হিতি আরো ভালো হবে। সব স্হানে সরবরাহ ঘাটতি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে দূর হয়ে যাবে।
এদিকে বিদু্যত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সন্ধ্যায় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। সামনের দিনেও কোনো প্রকার সংকটের আশঙ্কা নেই। বর্তমানে সারা দেশে অকটেন ও পেট্রোলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য জ্বালানি তেলের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। জ্বালানির সংকটের কথা বলে কেউ যদি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে অকটেন ও পেট্রল বিক্রি করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
এদিকে বিদু্যত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ৭ ও ৮ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলে পেট্রোল ও অকটেনের সংকটসংক্রান্ত সংবাদ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিপিসির আওতাধীন তেল বিপণন কোম্পানির মাধ্যমে সারা দেশে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী দেশে অকটেন ও পেট্রোলের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চলতি মে ও আগামী জুন মাসে প্রয়োজন অনুযায়ী অকটেন আমদানির সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এই সূচি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহেই জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ছে। অন্যদিকে ইস্টার্ন রিফাইনারি ও জ্বালানি তেল উত্পাদনকারী দেশীয় বেসরকারি প্ল্যান্টগুলোতে অকটেন ও পেট্রোল উত্পাদন অব্যাহত রয়েছে। এটি জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ আরো সুসংহত করবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনার দৌলতপুর থেকে পার্বতীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে যাত্রী পরিবহনে প্রাধান্য প্রদানসহ ইঞ্জিনের স্বল্পতার কারণে উক্ত ডিপোসমূহে অকটেন ও পেট্রোল সরবরাহে নির্ধারিত সময়ের তুলনায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে বর্তমানে সারা দেশে অকটেন ও পেট্রোলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।