স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারীর চিলাহাটিতে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেসের লাইট ইঞ্জিন ও খুলনাগামী আন্তনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় চিলাহাটি রেল স্টেশন মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা পর দুপুর ২টার দিকে স্বাভাবিক হয়েছে চিলাহাটি-ঢাকা রুটের ট্রেন চলাচল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে চিলাহাটি স্টেশনের কর্তব্যরত মাস্টার টুটুল চন্দ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে আজ বুধবার(১৮ জানুয়ারী) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিলাহাটি স্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় দুই ট্রেনের চালক যথাক্রমে রূপসা এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার নাজমুল হক ও মিতালীর সহকারী লোকোমাস্টার মাজেদুর রহমান সহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।
চিলাহাটি ফায়ার সার্ভিসের লিডার নুরে আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে চিলাহাটি ও ডোমারের দুইটি ইউনিট গিয়ে উদ্ধার কাজ চালায়। এ ঘটনায় প্রায় দুই ট্রেনের চালক সহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছে, আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চিলাহাটি পয়েন্ট ছেড়ে কিছুটা সামনে এগোচ্ছিল। এ সময় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইট ইঞ্জিনের সঙ্গে রূপসা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। ঘটনার পর থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চিলাহাটি-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পার্বতীপুর থেকে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শেষ করার পর এই রুটের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
চিলাহাটির স্থানীয় বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, আমরা একটা শব্দ পাই। এসে দেখি দুই ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। একটা ইঞ্জিন তো পার্বতীপুরে থাকে। আসার সময় নিশ্চয়ই ফোন করে আসছে। কিন্তু স্টেশন মাস্টার কীভাবে এই ইঞ্জিন লাইনে থাকা অবস্থায় আরেকটা ট্রেনকে কিয়ার দিল?
এ বিষয়ে রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের সহকারী লোকোমাস্টার তাজুল ইসলাম বলেন, মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইট ইঞ্জিনটাকে চিলাহাটির ভেতরে আগে রিসিভ করবে, তারপরে আমাদের গাড়ি ছাড়ার অনুমতি দেবে। কিন্তু স্টেশন মাস্টার ওই মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইট ইঞ্জিনকে রিসিভ না করেই, আমাদের যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। আমরা তো জানি না যে সামনে গাড়ি আছে। আমরা অনুমতি পেয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। ছেড়ে দেওয়ার পর কুয়াশার কারণে ওই ইঞ্জিন দেখা যায়নি। কাছাকাছি এসে যখন দেখা গেছে, তখন ব্রেক করতে করতে ধাক্কা লেগে যায়।
সৈয়দপুরে রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি সাফিউল আজম বলেন, পার্বতীপুর থেকে মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আনতে একটি খালি ইঞ্জিন চিলাহাটি যায়। লাইন কিয়ার না পেয়ে আউটারে দাঁড়িয়ে ছিল ইঞ্জিনটি। এ সময় খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চিলাহাটি পৌঁছালে, লাইন কিয়ার করে দেওয়া হয়। এরপর রূপসা এক্সপ্রেস খুলনা যাওয়ার সময়, দাঁড়িয়ে থাকা ওই খালি ইঞ্জিনকে ধাক্কা দেয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং দুটি ইঞ্জিন তিগ্রস্ত হয়েছে।