ডেস্ক রিপোর্ট: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এত বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্রোহীরা কি নৌকার প্রার্থীদের চেয়ে জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এখানে শুধু জনপ্রিয়তাই একমাত্র ফ্যাক্টর নয়, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তায় খুব বেশি একটা পার্থক্য থাকে না। নৌকার প্রার্থীকে হারানোর জন্য বিদ্রোহী প্রার্থী এবং নৌকাবিরোধীরা সব এক হয়ে যায়। যে কারণে ভোটের ফলে নৌকার প্রার্থীরা অনেক জায়গায় পরাজিত হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের সঙ্গে তৃণমূলের মানুষ এখনও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। মানুষ এখনও এ নির্বাচনকে আগের মতোই গ্রাম্য গোষ্ঠীগত নির্বাচন বলে মনে করে। যে কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অনেক সময় নৌকা বাদ দিয়ে অন্য প্রার্থীদের ভোট দিয়ে দেয়। আবার অনেক সময় তৃণমূল থেকে অজনপ্রিয় কারও নামও উঠে আসে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, তৃণমূল থেকে অনেক সময় ভুল নাম আসে। কখনও কখনও বিভিন্ন প্রভাবের কারণে সংস্থার রিপোর্টও প্রভাবিত হয়, ভুল আসে। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার সৎসাহস আওয়ামী লীগের আছে। আমরা ভুলগুলো খুঁজে বের করে সতর্ক হচ্ছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকপ্রত্যাশী থাকেন কয়েকজন। নৌকা প্রতীক পান একজন। তাদের জনপ্রিয়তায় খুব বেশি একটা পার্থক্য থাকে না। উনিশ-বিশ। পরে নৌকাকে হারানোর জন্য বাকি সবাই মিলে যান। এদের সঙ্গে নৌকাবিরোধীরাও যোগ দেন। যার ফলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা অনেক জায়গায় পরাজিত হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে অনেক জায়গায় সমালোচনা উঠছে, মনোনয়নে কোনো ত্রুটি রয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ রকম হয়তো নয়। নির্বাচনের পর এ অভিযোগগুলো আমরা দেখব। তিনি বলেন, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করাই আমাদের কাছে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। ভোটে অংশগ্রহণের হার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। মানুষ নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের প্রতি তাদের আস্থা আছে। বিএনপি জনগণের এ আস্থার জায়গাটাতে নেই। তারা শিগগিরই বুঝবে এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তটা তাদের সঠিক ছিল না।
ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে গত ২৮ নভেম্বর ১০০৪টি ইউপিতে ভোট হয়। ভোটের আগেই ১০০ ইউপিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ইউপির ৫২৫টিতে নৌকার প্রার্থীরা জয় পান। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৪৪৬ ইউপিতে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৭৪ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পড়েছে। গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৪ ইউপির ৪৮৬টিতে জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। ৩৩০টিতে জয়ী হন স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। আর প্রথম ধাপের ভোট হয় গত ২১ জুন। ২০৪টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত জয়ী ১৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২০ জন সরাসরি ভোটে এবং বাকি ২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৪৯টিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয়ভাবে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। তাই এ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করাকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে পার্টিসিপেশন মূলকথা। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপস্থিতি সর্বোচ্চ ছিল। এবারের নির্বাচনে রেকর্ড পার্টিসিপেশন হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এদেশে কখনও শান্তিপূর্ণ হয়নি। তবে এতে শেখ হাসিনা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।
নির্বাচনে সহিংসতার বিষয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতা সবসময় ছিল। পাকিস্তান আমল, সামরিক শাসনের আমলেও ছিল। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সব সরকারের সময়েই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে। তবে এটি আস্তে আস্তে এক সময় কমে আসবে।
বিএনপি সহিংসতা উসকে দিচ্ছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর ভর করে মারামারি ও হানাহানি সৃষ্টি করেছে। বিএনপি ঘোমটা পরে প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করছে। তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের আশ্রয় করে মারামারি করছে। খবর-সময়ের আলো