নিউজ ডেস্ক: গত বছরের ১৮ জুলাই ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। আগের দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খালি করে দিয়ে আন্দোলন দমনে অনেকটাই সফল হয় তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার। কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তখন সবাইকে চমকে দিয়ে ১৮ জুলাই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উত্তরাতে আন্দোলনকারীদের মিছিলে পানি বিতরণ করতে গিয়ে শহীদ হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। তার ‘পানি লাগবে, পানি!’ -ভিডিও দেখে অনেকের চোখেই পানি এসেছে।
১৫ জুলাই থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ১৮ জুলাই আন্দোলনে একক কৃতিত্ব ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এদিন রাজধানীর উত্তরা, প্রগতি সরণি, রামপুরা ব্রিজ এবং আশুলিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোতে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসব এলাকা চলে যায় শিক্ষার্থীদের দখলে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় শিক্ষার্থীদের। উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়ক থেকে বিএনএস টাওয়ার পর্যন্ত এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে হাজারো শিক্ষার্থীর মিছিল আর স্লোগানে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া গুলি, টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়।
কুড়িল চৌরাস্তা থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক, নর্দা হয়ে কোকাকোলা পর্যন্ত অবস্থান নেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), সরকারি কালাচাঁদপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গুলশান মডেল একাডেমি, ভিকারুননিসা স্কুল, হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সকাল থেকে শতাধিক পুলিশ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিল। বেলা ১১টার পর থেকে কয়েক দফার সংঘর্ষে আর পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে বাড্ডা, ভাটারা ও রামপুরা থেকে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে পুলিশকে ঘেরাও করেন। আন্দোলনকারীদের চতুর্মুখী ঘেরাওয়ের কবলে পড়ে পুলিশ মধ্যবাড্ডার র্যাংক্স আরএল স্কয়ার টাওয়ারের ছাদে আশ্রয় নেয়। অবরুদ্ধ অর্ধশতাধিক পুলিশকে বিকালে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করে বিমানবাহিনী ও র্যাবের ৫-৬টি হেলিকপ্টার। রামপুরায় বিটিভি ভবনে আগুন লাগার ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিটিভির সম্প্রচার।
এদিন সারা দেশে ৩১ জন শহীদ হন। এদের মধ্যে ১১ জনই ছিলেন ছাত্র। এর মধ্যে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন ২৫ জন। আহত হন সহস্রাধিক। আন্দোলনকারীরা ঢাকার সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। যানবাহন শূন্য হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী।
১৮ জুলাই ‘জুলাই আন্দোলন’ স্মরণে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের ঘোষণা
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ‘জুলাই আন্দোলন’ স্মরণে চলতি বছরের ১৮ জুলাই রাত ৯টায় সারা দেশে এক মিনিটের জন্য মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকবে।
বুধবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ নামক স্মরণ অনুষ্ঠানটির সময়সূচি ঘোষণা করেন। পোস্টে জানানো হয়, আন্দোলনের স্মারক হিসেবে এদিন এক মিনিটের প্রতীকী ‘ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কার্যকর করা হবে।×
এই প্রতীকী কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ১৮ জুলাই রাত ৯টায় হঠাৎ দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।