আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এগিয়েছে অর্থনীতি

বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, সকাল ০৮:৪২

Advertisement Advertisement

ডেস্ক: বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে (১৯৭১-২০২১) দেশের অর্থনৈতিক চিত্র প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এগিয়েছে। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েও আছে। বিশেষ করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে প্রত্যাশিত অবস্থানে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর লাল-সবুজের পতাকা পায় বাংলাদেশ। স্বাধীনতার জন্য বাঙালির অদম্য তাড়নার নেপথ্যে ছিল দ্ইু পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ বৈষম্য। আর সেই বৈষম্য কাটিয়ে এখন পাকিস্তানকে টপকে গেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতি ও মানব উন্নয়নের নানা সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করা সোনার বাংলা।

যদিও সদ্য জন্ম নেওয়া দেশটি সম্পর্কে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার রীতিমতো বাংলাদেশকে আখ্যা দেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে। কিন্তু হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন শক্তিশালী এক সিন্দুক- দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতি। কয়েকটি সূচকে তো বিশ্বের অনেক দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ এক দশকে সব সূচকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে বাংলাদেশের। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের তালিকায় আর স্বল্পোন্নত দেশ থাকবে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ববাসী যা ভাবতে পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ সময় পাট রপ্তানি করে দেশটি অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত। বিশ্বে পলিপ্রোপাইলিন যুগ আসার পর পাটপণ্যের চাহিদা দ্রুত হ্রাস পায়, কিন্তু সেই শূন্যস্থান ক্রমান্বয়ে দখল করে নেয় তৈরি পোশাক খাত।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব চাইতে বেশি অবদান এই তৈরি পোশাক খাতেরই। মোট প্রবৃদ্ধির ৬-৮ শতাংশই আসছে পোশাক খাত থেকে। বাংলাদেশের এই শিল্পকে বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুকরণ করছে। স্বাধীনতার পরে যে শিল্প আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছে তার একমাত্র মাধ্যম কিন্তু এই পোশাক শিল্পই। বিশ্বের বুকে নিজেদের কঠোর শ্রম ও উৎপাদন দক্ষতা দেখাতে পারার প্রমাণ মেলে এই শিল্পের মাধ্যমে। ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)।

স্বাধীনতার ঠিক পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড ও ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে. আর. পারকিনসন ‘বাংলাদেশ : দ্য টেস্ট কেস অব ডেভেলপমেন্ট’ নামের একটি গবেষণামূলক বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, যদি এই দেশটি উন্নতি করতে পারে, তা হলে নিঃসন্দেহে বলা যায় পৃথিবীর যে কোন দেশ উন্নতি করতে পারবে।’

সেসব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, তখন অনেক বিবেচনাতেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদ ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়গান শোনা যায়। সমৃদ্ধির বহু নামে বাংলাদেশকে পরিচিতি দেওয়া হয় বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে।

ঈর্ষণীয় এসব অর্জনের উচ্চতার সবচেয়ে বড় পরিমাপের পরিষ্কার ধারণা উঠে এসেছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। বিশ্বের নীতিনির্ধারণী এই আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তকমা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল দেশ।

বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা গেছে। স্বাধীনতার সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি খাদ্যশস্য এখন উৎপাদন করতে পারছে দেশ।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশের অর্থনীতির পালা বদলের চিত্র সহজেই বোঝা যায় দেশটির অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ সব সূচকের প্রথম যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায়, ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৬২৯ কোটি ডলার, মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ ডলার, রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। সে সময় রিজার্ভ ছিল ১১০ কোটি টাকা, আমদানি ব্যয় ছিল ২২৬ কোটি ডলার, রাজস্ব আয় ছিল ২৮৫ কোটি টাকা আর দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ। ১৯৭৬ সালে রেমিটেন্স ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।

পঞ্চাশ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২১-২২ সালে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। জিডিপির আকার ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৮ কেটি ডলারে, আর রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। রেমিটেন্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলারে, যা দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বড় অবদান রেখে চলেছে। গত ৫০ বছরে দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ থেকে কমে ২০.৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বাংলাদেশ এখন তার নিজস্ব রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ঋণও দিচ্ছে। শুধু দেশেই নয়, রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কাকেও ঋণ সহায়তা দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, গত ৫০ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। যে পাকিস্তানকে আমরা পরাজিত করেছি সেই পাকিস্তান এখন অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। তবে দেশে ৭৫ পরবর্তী অর্থনীতির যত পরিবর্তন ঘটেছে তার ৭৩ শতাংশ হয়েছে গত ১২ বছরে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।

মন্তব্য করুন


Link copied