ডেস্ক: ফোনে কথা বলেছেন একজন। যিনি নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মন্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠও তার হুবহু মিল। মন্ত্রী পরিচয় দিয়ে বলা হয় সিরাজগঞ্জে আসবেন তিনিসহ একটি দল।
সেজন্য ভিআইপি আবাসিক হোটেলে রুম দরকার। একই সঙ্গে ৫০ জনের খাবার। মন্ত্রী, সচিবদের কণ্ঠ নকল করে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিরাজগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক যমুনা প্রবাহর সম্পাদককে। পরে প্রকারণা করে তার কাছ থেকে নেওয়া হয় ১৯ হাজার টাকা।
ভুক্তভোগী মোস্তফা কামাল সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক যমুনা প্রবাহ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় ‘যমুনা বিলাস’ নামে তার একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ০১৯৯১-৫৬২২৪১ মোবাইল নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে রাশেদ নামে এক ব্যক্তি ফোন করেন। তিনি নিজেকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির এপিএস পরিচয় দেন।
রাশেদ তাকে বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা অংশ হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি ১৭ জনের একটি দল সিরাজগঞ্জ আসবেন। তারা পাঁচদিন জেলায় অবস্থান করবেন। থাকা-খাওয়ার জন্য ভিআইপি হোটেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলবেন বলে জানান। অপর এক ব্যক্তি তখন মোস্তফার সঙ্গে কথা বলেন; যার কণ্ঠ হুবহু টিপু মুনশির সঙ্গে মিলে যায়।
ওই ব্যক্তি মোস্তফাকে বলেন, রাশেদ যা বলেছে আপনি সেটি সমন্বয় করেন। এরপর মোস্তফা স্থানীয় একটি অভিজাত হোটেলে রুম ও রেস্টুরেন্ট বুকিং করেন। পাঁচদিনের জন্য হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ মোট ৫ লাখ টাকা বিল হয়। বিষয়টি তিনি রাশেদকে জানালে তিনি শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নম্বর (০১৭৭-৩৫৬০৬৭৩) দেন। মোস্তফাকে তিনি বলেন শহীদুল অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিলটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করবেন।
শহীদুলকে ফোন করলে তিনি মোস্তফাকে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলেন। শহীদুল বলেন, যেহেতু এটি সরকারি বিল; সেটি জমা করার আগে একটি ফি দিতে হয়। সে জন্য তার মোবাইল নম্বরে নগদ অ্যাকাউন্ট আছে উল্লেখ করে ১৯ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে রাশেদের সঙ্গে কথা বলেন মোস্তফা। তিনিও একই কথা বললে শহীদুলের নগদ অ্যাকাউন্টে ১৯ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এরপর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা জমা হয়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে মোস্তফা বার বার রাশেদ ও শহীদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, দুই ঘণ্টার মধ্যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। পরবর্তীতে নম্বরগুলোও বন্ধ পাওয়া গেছে।
মোস্তফা কামাল বলেন, এর আগেও ফোন পেয়ে অনেকের অনেক কাজ করে দিয়েছি। কোনো অসুবিধা হয়নি। এবার বিষয়টি অন্য রকম হলো। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই সদর থানায় প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির শুক্রবার দুপুরে বলেন, মোস্তফা কামাল একজন সচেতন মানুষ হয়েও প্রতারিত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। প্রতারক চক্রটিকে সনাক্তের চেষ্টা চলছে।