ওরা আসবে বলে বিমানবন্দর যেন পরেছিল লাল-সবুজের শাড়ি। আকাশের মেঘেরা নামবে নামবে করেও নামেনি বৃষ্টি হয়ে। সূর্যের প্রখরতাকে হারিয়ে দিয়েছিল বাতাসের স্নিগ্ধতা। পথে পথে নেমেছিল মানুষের ঢল। যে যার মতো করে সেই ঢল থেকে চ্যাম্পিয়নদের করেছিল বরণ।
এমন দিন আর কবে দেখা যাবে। যেদিন নেপালকে হারিয়ে দেশের ফুটবল-আকাশে চাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছিলেন সাবিনা-কৃষ্ণারা, সেদিন থেকেই শুরু জল্পনা-কল্পনা। অনেক আরাধ্যের এই জয় ঘিরে উৎসবে মাতে ১৬ কোটির বেশি মানুষের দেশটি। শহর-নগর, গ্রামগঞ্জে নতুন করে শোনা যায় ফুটবলের জয়গান! যে জয়গানে মাতোয়ারা হয়েছেন চ্যাম্পিয়নরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যাঁর মতো করে ভিডিও-ছবি দিয়ে দেশবাসীকে জানান দেন- 'বাংলাদেশও পারে'।
বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে নেপাল থেকে উড়ে আসা বিমানটি নামবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। খবরটি আগের দিনই জানা যায়। চাউর হয় ফুটবল আঙিনায়। কান পেতে শোনেন ফুটবলপ্রেমীরা। পরদিন সকাল থেকেই এক এক করে দল বেঁধে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে হাজির। নিরাপত্তার বলয় ভাঙতে না পেরে গেটের দুই পাশেই দাঁড়িয়ে যান হাজার হাজার সমর্থক, যাঁরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন। দেখতে চেয়েছিলেন প্রিয় দেশের এমন বিজয়। কারও হাতে দেশের পতাকা, কারও আবার প্ল্যাকার্ড, কেউ লাল-নীল ব্যানারের মাঝে ভালোবাসার কথাগুলো লিখেছেন পরম আবেগে। জানিয়েছেন কতটা অধীর ছিলেন তাঁরা।
শুধু কি বিমানবন্দর? বিমানের ভেতর কেক কেটে উদযাপনের একটা পাট শেষ করে যখন সাবিনারা ছাদ খোলা বাসে উঠলেন, চারপাশ থেকে অসংখ্য সমর্থক ফুলেল শুভেচ্ছায় তাঁদের জানিয়ে দেন- 'তোমরাই সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।' বাসে উঠেই আপ্লুত মনিকা-মারিয়ারা। ততক্ষণে 'বাংলাদেশ, বাংলাদেশ' স্লোগানে প্রকম্পিত আশপাশ। এরই মধ্যে ট্রফি হাতে বাস থেকেই উৎসবে যোগ দেন মেয়েরা। এরপর হাত নেড়ে ফুটবলপাগল জনতার অভিবাদনের জবাব দেন তাঁরা। কিছুক্ষণ পর বিমানবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে যাত্রা করে বাসটি। পেছনে লম্বা লাইন। কেউ হেঁটে, কেউ বাইকে চেপে আবার কেউ ট্রাকের ওপর। যে যার মতো করে ছুটতে থাকে বাসের পিছু পিছু। অবাক করা বিষয়, বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের বেশি রাস্তার দু'পাশেই ছিল মানুষের জটলা। নানা রঙে, নানা ঢঙে সেজে তারা জানিয়ে যায় মেয়েদের অভিনন্দন। তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার পথে মেয়েরাও সব ক্লান্তি ভুলে মেতেছিলেন চ্যাম্পিয়ন পার্টিতে।
বাফুফে ভবনের সবুজ গালিচায় বাসটি যেতেই আরেক উন্মাদনা। বাজি ফুটিয়ে, রং ছড়িয়ে, ছন্দে ছন্দে বরণ করে নেওয়া হয় বীরকন্যাদের। তখনও সানজিদাদের মুখে হাসির ঝলক। তাতে আড়াল হয়ে গেল লম্বা ভ্রমণের ধকলটাও। নতুনভাবে দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় আঙিনায় চলল আনন্দ উচ্ছ্বাস।
অবশ্য বাফুফে চ্যাম্পিয়নদের জন্য তেমন কোনো বরণডালা সাজায়নি। অনেকটা সাদামাটাই ছিল ভবনের ভেতর-বাহির। পুরো ভবনে একটি ব্যানার ছাড়া ভিন্ন কিছু চোখে পড়েনি। তাতে থেমে ছিল না উৎসব। বাফুফের উঠোনে আসা হাজারো মানুষের উল্লাস আর ভালোবাসার বার্তায় তখনও মেতে ছিলেন সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপাজয়ী মেয়েরা।