আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

রংপুরের মানুষ বিজয়ের স্বাদ পায় ১৭ ডিসেম্বর

শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, বিকাল ০৫:৫৫

নজরুল মৃধা
১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে বাড়িতে আমরা ভাত খেতে বসেছি। এসময় ফুপাত বড় ভাই মনিদা এসে বলল রংপুর টাউন হলে সাদা পতাকা উড়িয়েছে খান সেনারা। মু্িক্তযুদ্ধ শেষ। আমরা স্বাধীন। ভাইয়ের এই কথা শুনে ভাত না খেয়েই আমার র‌্যালি সাইকেলটি রওনা দিলাম টাউন হলের দিকে। আমি তখন রংপুর হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। টাউন হলে অপরদিকে লক্ষী সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে দেখি টাউন হলের ওপর পুর্বপাশে বিশাল এক সাদা পতাকা উড়ছে। সাদা পতাকার মানে কি বুজলাম না। তবে কিছুক্ষন পরেই ভুল ভাঙ্গল। সাদা পতাকার মানে পাকিস্তানিরা সিজ ফায়ার অর্থাৎ আত্মসমর্পন করেছে। খুশিতে মন ভরে গেল। টাউন হলের বিপরীত দিক থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম পতপত করে সাদা পতাকা উড়ছে। প্রথম অবস্থায় ওই সাদা পতাকা দেখার জন্য লোক জনের ভীড় খুব একটা না থাকলেও আধা ঘন্টার মধ্যে টাউন হলের সামনে শতশত মানুষ জমা হয়েছিল আত্মসর্মপনের ওই পতাকাটি দেখার জন্য। আস্তে আস্তে মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে পতাকাটি দেখার জন্য। অথচ একঘন্টা আগেও রংপুর নগরী ছিল জন্যশূন্য। রাস্তায় মানুষজন ভয়ে চলাচল করত না।  সামান্য সময়ের ব্যবধানে জনসমাগম বাড়তে থাকে।  আমি কিছুক্ষন পর আমাদের পাড়ায় চলে আসি। বাড়িতে সাইকেলটা রেখে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় চলে আসি। যেখানে জয় বাংলা বলা নিষেধ ছিল সেখানে জয়বাংলা, ভুট্টোর মুখে লাথি মারো বাংলা দেশ স্বাধীন কর, টিক্কা বেটা ভিক্ষা করে শেখ মুজিবের বাড়ি ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠতে শুরু করে নগরীর মোড়ে মোড়ে।  তবে কিছুক্ষণ পর খবর আসে সাদা পতাকা উড়লেও শহরের অদূরে দমদমা এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হচ্ছে। সেই যুদ্ধে বেশকজন রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্য মারা যান। 

মূলত ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা রংপুর শহরে প্রবেশ করে ১৭ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনী শহরে আসতে থাকে। ওই দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশকটি ঘটনা এখনো স্মৃতির মনি কোঠায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।  সকাল বেলা আমরা কয়েকজন হাটতে হাটতে পাচপীরের দরগা (বর্তমান রাজা রাম মোহন মার্কেটের সন্নিকটে) এলে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের কৈলাশ রঞ্জন স্কুলে নিয়ে যায়। ৭১ এ কৈলাশ রঞ্জন স্কুলের একাংশ রাজাকারদের আস্তানা ছিল।  সেখানে গিয়ে দেখতে পাই রাজাকারদের ব্যবহৃত কিছু থ্রি নট থ্রি রাইফেল পড়ে রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সবাইকে দাঁড় করিয়ে একটি করে থ্রি নট থ্রি রাইফেল ঘাড়ে দিয়ে বলল চল আমরা সবাই রংপুর শহর ঘুরি।  আমরা যখন স্কুল থেকে বের হওয়ার উপক্রম করেছি সে সময় ভারতীয় মিত্র বাহিনীর একদল সৈন্য এসে আমাদের বাধা দেয়। এখান  থেকে কোন অস্ত্র নিয়ে কেউ বাইরে যেতে পারেনা বলে ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে মুক্তযোদ্ধাদের সাথে ভারতীয় সেনাদের তুমুল তর্কবিতর্ক হয়। কিন্তু ভারতীয় সৈন্যরা আমাদের অস্ত্র নিয়ে বের হতে দেয়নি। এর পর আমরা ওই মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে ছোট একটি ট্রাকে শহর ঘুরি। মুক্তিযোদ্ধারা ওই সময় তাদের হাতে থাকা স্টেনগান দিয়ে শূন্যে গুলি ছুড়ে জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু, তোমার নোতা - আমার নেতা শেখ মুজিব।  স্লোগান দিতে থাকে। তাদের সাথে ট্রাকে কিছুক্ষণ ঘোরার পর বাড়িতে যেই ঢুকছি ওই সময় আমার আব্বা প্রয়াত ফজলুল করিম মৃধা বলেন, চল দমদমা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা এবং ওইস্থানে খান সেনারা অনেক মানুষকে শহীদ করছে। কালকে দমদমার আশপাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ হয়েছে চল দেখে আসি। রিক্সায় আব্বা তার বন্ধু ডাক্তার আলমগীর ও আমি তিনজনে রওনা হই দমদমার উদ্দেশ্যে। জাহাজ কোম্পানির মোড় থেকে রওনা হয়ে সাবেক তেতুল তলা (বর্তমান শাপলা চত্বর) পর্যন্ত যেতে দেখি শহর লোকে লোকারন্যে পরিনত হয়েছে। মানুষের ভীড়ে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই সময় আত্মসমর্পনকারি পাকিস্তানিদের  রংপুর ক্যন্টমেন্টসহ বিভিন্নস্থান থেকে ধরে এনে মডেল স্কুলে(বর্তমান ক্যাডেট কলেজ) বন্দি শিবিরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মানুষের ভীড়ে পাকিস্তানিদের বহন করা গাড়ি চলছিল খুব ধীরে ধীরে। এসময় দেখেছি পাকিস্তানি খান সেনাদের প্রতি বাঙ্গালির ঘৃণা প্রকাশ।  কেউ ওদের লক্ষ্য করে ঢিল জুতা ছুড়ছিল। আবার কেউবা থুতুও নিক্ষেপ করছিল। আমার আব্বা ও ডাক্তার আলমগীর তাদের পায়ের জুতা খুলে খান সেনাদের নিক্ষেপ করেছিল। এসময় খানসেনার অসহায়ের মত ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছিল। 

এসময় খান সেনাদের উদ্দেশ্যে আব্বাকে বলতে শুনেছি মুক্তিবাহিনী কি এখন বুঝতে পারছ পাকিরা। তোমরাতো বাঙ্গালিদের মানুষ মনে করতা না। এখন দেখ হাজার হাজার বাঙ্গালিতোমাদের ঘৃণা করছে। খানসেনাদের উদ্দেশ্যে এধরণের অনেক কথাই অনেককে বলতে শুনেছি।  রিক্সায় তেতুলতলা  পার হয়ে মডেল স্কুল পর্যন্ত যাওয়ার পর দেখি ওই স্কুলটিকে বন্দি শিবির করা হয়েছে। পাকিস্তানি এবং দেশি রাজাকারদের অনেকেই ওই বন্দি শিবিরে নিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে দমদমা ব্রিজ গেলাম। গিয়ে দেখি ব্রিজ একটি অংশ মুক্তিবাহিনীরা উড়িয়ে দিয়েছে। পাশেই রাবার ও ড্রাম দিয়ে বিকল্প ব্রিজ তৈরী করা হয়েছে। ওই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।  দমদমা বীজের উত্তর পাশে মানুষের ভীড়। গিয়ে শুনলাম ওখানে কারমাইকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষকসহ অনেকইে হত্যা করা হয়েছে। দমদমার ওই স্থানটি এখন বধ্যভূমির স্বীকৃতি পেয়েছে। দমদমা থেকে ফিরেই চলে যাই টাউন হল চত্বরে। ওখানেও দেখি মানুষের ভীড়। টাউন হলের পিছনের বড়াইগাছের পাশে বড় ইন্দ্রারাটিতে মানুষের লাশের গন্ধ।  এর পিছনেই হট্রিকালচার সেন্টার ( বর্তমান চিড়িয়াখানা)। সেখানে গিয়ে দেখি অসংখ মানুষের গলিত লাশ। এর মধ্যে বেশ কিছু শাড়ি ও চুড়ি দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত টাউন হল কিংবা চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে আম বাগানে যেখানে বীরবাঙ্গলিদের হত্যা করা হয়েছে সেই স্থানটি আজও বধ্যভূমির স্বীকৃতি পায়নি। ১৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করে নিতে স্বজন এবং শহরবাসি ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়েছিল জাহাজ কোম্পানির মোড় ও তিনকানিয়া (বর্তমান পায়রাচত্বরে)। অনেকেই  তার প্রিয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে সাদরে বরণ করেছে। আবার অনেক মা প্রিয় স্বজনকে না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পরের দিন এসেছে। কিন্তু স্বজনের আর দেখা পায়নি। ফিরে আসেনি অনেকের স্বজন। তেমনি সর্ম্পকে আমার ফুপাত ভাই শাহজান আর ফিরে অসেনি। অথচ স্বাধীনতার অনেকদিন পর্যন্ত তার মা ও স্বজনরা আশা করেছিল  আজ বুঝি শাহজাহান আসবে। কিন্তু তিনি আর আসেননি। পরে ধারণা করা হয় নিশবেতগঞ্জ বধ্যভূমিতে তাকে হত্যা করেছে খানসেনারা। 

আর দুএকটি কথা তুলে ধরতে চাই। একদিন রাত ১২ টার দিকে বাড়ির সকলেই চমকে উঠলাম। ভাবলাম খান সেনা এলো নাকি। একটু পরে ভুল ভাঙ্গল খান সেনা নয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা  এসেছে। আব্বা সবাইকে চুপ থাকতে বলে ঘরের আড়ার এক কোন থেকে (ছাদ) একটি প্যাকেট ওই মুক্তিযোদ্ধাকে দিল। প্যাকেটটি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা চলে যাওয়ার পরে আব্বা বলেন, ওই প্যাকেটে ১২টি বাংলাদেশের পতাকা ছিল।  মুক্তিযোদ্ধারা মাঝে মধ্যে এসেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে যেত আব্বার কাছ থেকে। কারণ আব্বার পতাকা দেয়ার একটি সুবিধা ছিল। তা হল আমাদের সে সময় ৪টি কাপড়ের দোকান ছিল। এর মধ্যে রেডিমেট কাপড়ও ছিল। রেডিম্টে পোষাক প্রস্তুতে বেশকজন সেলাই কারিগর ছিল। তারাই গোপনে জাতীয় পতাকা তৈরী করে আব্বাকে দিত। আব্বা জীবনের ঝুকি নিয়ে সময় সুযোগ বুঝে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জাতীয় পতাকা সরবরাহ করত । আব্বাকে বলতে শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য কয়েকবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরিবার বড় এবং এপ্রিলের পর শহর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাইরে যাওয়া দুঃসাধ্য থাকায় শহরের বাইরে অনেকেই যেতে পারত না। ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় বুদ্ধিজীবী হত্যার পর জেলা শহরগুলোতেও একটি তালিকা করা হয়।  ওই তালিকায় আব্বার নামও ছিল। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ায় জেলা শহরের হত্যার নীল নকসা অনেকটাই বাস্তবায়ন করতে পারেনি পাক হানাদাররা।  চূড়ান্ত বিজয়ের বেশ কদিন আগে থেকেই প্রতিদিন সকালে ভারতীয় বিমান আকাশে চক্কর দিত। যেদিন চক্কর দিত না সে সেদিন নানা আতঙ্ক ও শঙ্কা কাজ করত অনেকের মাঝে। 

মহান বিজয়ে কথা এলে প্রথমেই বলতে হয় রংপুরের মানুষ ৩ মার্চ প্রথম যুদ্ধ আরম্ভ করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ রংপুরের শংকু সমজদার। ১৯৭১ সাল উত্তাল ৩ মার্চ। চারিদিকে স্বাধীনতার গান। এদিন ছিল রংপুরের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের রংপুরে প্রথম শহীদ হন ১১ বছরের টগবগে কিশোর  শংকু সমাজদার। সেদিনের সেই মিছিলে যে ২০/২৫জন শিশু কিশোর ছিল তার মধ্যে আমিও ছিলাম। উর্দু ও ইংরেজি সাইনবোর্ড ভাঙ্গার ছোটদের দুটি দল ছিল। একটি মিছিলের পিছনে আরেকটি মিছিলের সামনে। উর্দু ও ইংরেজি লেখা সাইন বোর্ড ভাঙ্গার কাজ ছিল আমাদের। মিছিলের আগে অথবা পিছনে সব সময় থাকত এই ছোটদের দলটি। এমনি এক সাইন বোর্ড ভাঙ্গতে গিয়ে অবাঙ্গালির গুলিতে প্রাণ প্রদীপ নিভে যায় শংকুর। নিজের চোখের সামনে দেখেছি শংকুর মাথার এফোর ওফোর হয়ে যায় অবাঙ্গালী শরফরাজের বাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে। শংকু মারা যাওয়ার খবরে উত্তেজিত হয়ে উঠে রংপুরবাসী। ওইদিন  অবাঙ্গালিদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে শহীদ হয় আরও ২ জন। এরা হলেন, তৎকালীন রংপুর কলেজের ছাত্র মিঠাপুকুর উপজেলার আবুল কালাম আজাদ এবং ওমর আলী নামের এক সরকারী চাকরিজীবী। ওমর আলী ছুরিকাঘাতে মারা যান শহরের দেওয়ান বাড়ি রোডের জেনারেল বুট হাউসের সামনে ও আবুল কালাম আজাদ প্রান হারান বাটা গলির মুখে। কিশোর শংকুসহ অপর দু’জনের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রংপুরের মুক্তিযুদ্ধ। এ ছাড়াও সেইদিন গুলির আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যায় রংপুর কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ও শরিফুল আলম মকবুল। ওই দিন বিকেল ৩ টায় শহরে কারফিউ জারি করে তৎকালিন প্রশাসন। ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ রংপুরে কারফিউ চলে। এর পর ২৮ মার্চ রোববার রংপুরের মানুষ জেগে উঠেছিল নতুন উদ্দ্যোমে । স্বাধীনতা চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চল হতে লাঠিসোটা, তীর ধনুক, বল্লম ইত্যাদি নিয়ে রংপুর ক্যান্টমেন্ট আক্রমণ করে বেলা ৩ টার দিকে। এতে ক্যান্টমেন্টের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈন্যরা এ সমস্ত বিক্ষুব্ধ জনতার উপর ঝাপিয়ে পরে এবং অসংখ্য মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ওই দিন রংপুরের অগনিত মানুষ প্রাণ দিয়ে সৃষ্টি করে স্বাধীনতার আরেক অধ্যায়। এর পর ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে রংপুরের প্রথম গণহত্যা ঘটে দখিগঞ্জ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। এর পর মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে নিসবেতগঞ্জ গণহত্যা, দমদমা ব্রীজ গণহত্যা, বলারখাইল গণহত্যা, ঝাড়ুদার বিল ও পদ্মপুকুরের গণহত্যা, জয়রাম আনোয়ার মৌজার গণহত্যা, সাহেবগঞ্জের গণহত্যা, লাহিড়ীরহাটের গণহত্যা, ঘাঘটপাড়ের গণহত্যা, জাফরগঞ্জ গণহত্যাসহ বিভিন্নস্থানে গণহত্যা চালায়। এতে রংপুরের হাজার হাজার মানুষ হারায় তাদের প্রিয়জনকে। 

১২ ডিসেম্বর রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া সমগ্র রংপুর মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৩ ডিসেমবর গংগাচড়ায়  ২১২ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। ১৫ ডিসেমবর তিস্তা ব্রীজে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ১৬ ডিসেম্বর রংপুর শহরের অদূরে দমদমা এলাকাতেও লড়াই চলতে থাকে। ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ হানাদার মুক্ত হয় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল। নয় মাসের ভয়াল দিনের অবসান ঘটিয়ে রংপুরের মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ বিজয়ের আনন্দ। রংপুরে উদিত হয় স্বাধীনতার লাল সূর্য খচিত পতাকা।

( লেখক কবি ও সাংবাদিক)

মন্তব্য করুন


 

Link copied