নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ।। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। রংপুর নগরীর পূজামণ্ডপে মণ্ডপে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দেবীর বিদায় ক্ষণে মণ্ডপগুলোতে সকাল থেকেই শুরু হয় অঞ্জলি দেওয়া। ভক্তরা দলে দলে এসে অঞ্জলি দেন।
একদিকে বিসর্জনের বিষাদ, অন্যদিকে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন নারীরা। জীবনকে রঙিন করে রাঙিয়ে তুলতে প্রতিটি মণ্ডপে ছিল নারীদের সিঁদুর খেলার উৎসব। এ সময় ঢাকের বাদ্যে পরিবেশ হয়ে ওঠে আনন্দমুখর। একযোগ সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুর্গাপূজার এ বছরের আনুষ্ঠানিকতা।
নগরীর শ্রী শ্রী করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দির, ধর্মসভা মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপগুলো দেখা যায়, সকাল থেকে ভক্তরা পূজামণ্ডপগুলোতে আসতে শুরু করে। তখন চলছিল মণ্ডপগুলোতে দশমীর বিহিত পূজা আর দর্পণের আনুষ্ঠানিকতা। যখন পূজা চলছিল, তখন প্রতিমার সামনে নারীদের হাতে হাতে থাকা প্লেটে সিঁদুর আর অঞ্জলি। পূজা অর্চনার পর কেউ কেউ শেষবারের মতো দেবী দুর্গার সিঁথিতে লাগিয়ে দেন সিঁদুর। এরপরেই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন নারীরা। এসময় একে অপরের গালে–মুখে সিঁদুর মেখে আগামী দিনের জন্য শুভ কামনা জানান। বিবাহিত নারীদের পাশাপাশি তরুণী ও শিশুদেরও সিঁদুর খেলায় অংশ নিতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন তারা।
নগরীর শ্রী শ্রী করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দির সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠা সুস্মিতা সাহা, পারিমিতা রায়, নন্দিনী দাস বলেন, এবার অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। সেই সঙ্গে উৎসবমুখর ছিল প্রতিটি পূজামণ্ডপ। দেবীর বিদায়ে আমাদের সিঁদুর খেলায় যেন অন্য রকম এক ভালোবাসা ফুটে ওঠে। এই দিনের জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। তাই সবাই বিজয়া দশমীতে মায়ের বিদায় বেলার আগ মুহূর্তে মায়ের আশীর্বাদ নিতে এসেছি। সে সঙ্গে অতীত জীবনের পাপ মোচন ও অশুভ শক্তির কবল থেকে বাঁচতে দেবী দুর্গার কাছে আশীর্বাদ কামনা করেছি যেন সারা বছর পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দে থাকতে পারি।
শাস্ত্রমতে, স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে দেওয়া সিঁদুর নিজের সিঁথিতে লাগিয়ে আশীর্বাদ নেন। পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে দেন তারা। সিঁদুর খেলা শেষে শেষবারের মতো দেবীর আরাধনা করেন তারা।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, এদিন দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। এদিন দেবী দুর্গা মর্ত্যে ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের অসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এসব প্রবৃত্তি বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে রংপুর নগরীর কালেক্টরেট সুরভি উদ্যানের সামন থেকে সন্ধ্যায় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এরআগে, বিকেল থেকেই ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে প্রতিমাগুলোকে নিয়ে শোভাযাত্রাস্থলে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন এলাকার ভক্তারা। সন্ধ্যায় নগরীর মুলাটোল পুকুর, ঘাঘটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ বছর রংপুর জেলায় ৯১২টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।