ডেস্ক: কোভিড-১৯ মহামারীকালে শিক্ষার্থীদের পাঠ অভ্যাসেও অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৭ ঘণ্টা লেখাপড়া করে- মহামারীর আগে এমন শিক্ষার্থী ছিল ৬০ শতাংশ। কিন্তু মহামারীকালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের পাঠদানের বাইরে কোনো লেখাপড়াই করত না- মহামারীর আগে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। কিন্তু মহামারীকালে কোনো পড়ালেখাই করেনি- এমন শিক্ষার্থীর হার গ্রামে ৩৮ শতাংশ, উপজেলা পর্যায়ে ২৪ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিল ২২ শতাংশ।
মহামারীকালে দেড় বছরের বেশি সময় দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ঘাটতিপূরণে এই সময়ে টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালু করে সরকার। এতে শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ সুবিধা পেলেও ব্যতিক্রম চিত্র ছিল গ্রামাঞ্চলে। ব্যানবেইসের জরিপে উঠে এসেছে, করোনাকালে দেশের গ্রাম অঞ্চলের ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছিল অনলাইন ক্লাসের বাইরে। আর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত পাঠ কার্যক্রমের আওতার বাইরে ছিল গ্রামের ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
শিক্ষাব্যবস্থায় করোনার প্রভাব বিষয়ে জানতে চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর একটি জরিপ চালায় ব্যানবেইস। এতে ১৯টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ২৪০টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৫১৬ জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অংশ নেন। উপজেলাগুলোর মধ্যে ৯টি গ্রাম, তিনটি শহর, দুটি পাহাড়, দুটি চর ও একটি চা বাগান অঞ্চলের। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক জরিপ চালানো হয় গ্রামাঞ্চলের ১৪৪টি, উপজেলা পর্যায়ের ৫০টি ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের ১ হাজার ৯৫৮ জন, উপজেলা পর্যায়ের ৬৪৮ এবং সিটি করপোরেশনের ৬৫২ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চালানো হয় ব্যক্তিপর্যায়ের জরিপ। এসব জরিপে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে ব্যানবেইস।
ব্যানবেইসের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৪০টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩৬টিতে অনলাইন পাঠদান চালু ছিল। অর্থাৎ অনলাইনে পাঠদান চালু ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে। আর অনলাইন ক্লাসগুলোয় শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের গড় হার ছিল ১৫ শতাংশ। বাকি ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছিল অনলাইনভিত্তিক পাঠ কার্যক্রমের বাইরে। এর মধ্যে অনলাইন পাঠদানে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে ছিল গ্রামের শিক্ষার্থীরা। জরিপের তথ্য বলছে, গ্রামাঞ্চলের ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, উপজেলা পর্যায়ের ১২ এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছে।
একইভাবে সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত পাঠদান সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে ছিল গ্রামের শিক্ষার্থীরা। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সংসদ টিভিতে সম্প্রচার হওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে গ্রামাঞ্চলের মাত্র ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিভি পাঠদানের আওতায় ছিল ৩৬ শতাংশ। আর সিটি করপোরেশন এলাকার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের ক্লাসে অংশ নিয়েছে।
তবে ভিন্নমত রয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ‘ব্যানবেইসের প্রতিবেদন আমাদের কাছে দেয়নি। তবে যে তথ্য-উপাত্তের কথা বলা হলো, তার সঙ্গে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্যের মিল নেই। করোনাকালে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে টেলিভিশন বা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পৌঁছানো যায়নি, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়েছেন শিক্ষকরা। আমরা অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া সচল রেখেছি।’
ব্যানবেইসের জরিপ ও মাউশির মাঠপর্যায়ের তথ্যের গরমিলের বিষয়ে জরিপসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ সময়ই জরিপের তথ্য ও প্রশাসনিক তথ্যের সঙ্গে অনেক অমিল থাকে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা নিজেদের ‘পারফরম্যান্স’ দেখানোর জন্য কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে বলেন। কিন্তু জরিপে সরাসরি শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া যাচাই-বাছাইয়েরও একটি বিষয় রয়েছে।