আর্কাইভ  বুধবার ● ২০ আগস্ট ২০২৫ ● ৫ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২০ আগস্ট ২০২৫
দুদকের মামলায় সাজার হার কমছে, বাড়ছে খালাস

দুদকের মামলায় সাজার হার কমছে, বাড়ছে খালাস

ফেব্রুয়ারির ভোটে সংশয় দেখছে না বিএনপি

ফেব্রুয়ারির ভোটে সংশয় দেখছে না বিএনপি

নজিরবিহীন লুটপাট ‘ভঙ্গুর’ ব্যাংক খাত

হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে ঋণ কেলেঙ্কারি-পাচার
নজিরবিহীন লুটপাট ‘ভঙ্গুর’ ব্যাংক খাত

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনের আড়ালে সমন্বয়কদের চাকুরি!

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনের আড়ালে সমন্বয়কদের চাকুরি!

দুদকের মামলায় সাজার হার কমছে, বাড়ছে খালাস

বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, দুপুর ১১:০৬

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজার হার কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। ২০২৪ সালে বিচারিক আদালতে দুদকের মামলায় সাজার হার নেমে এসেছে ৪৮ শতাংশে, আর চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই (৭ মাসে) এ হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশ। অথচ ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাজার হার ছিল ৬০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে।

দুদক থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালে বিচারিক আদালতে দুদকের ২৯৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশেষ জজ আদালতে ৯৯টি এবং ঢাকার বাইরে আদালতগুলোতে ১৯৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে ১৫৭টিতে সবাই খালাস পেয়েছেন। বাকি ১৩৮টিতে সাজা হওয়া মামলার মধ্যে ঢাকায় ৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আদালতগুলোয় ৮৮টি মামলার আসামিরা দ-িত হন।

গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে দুদকের ১৪৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি মামলায় সাজা হলেও বাকি ৭৪টি মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। অর্থাৎ, ৪৯ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে, আর ৫১ শতাংশ খালাস পেয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালে দুর্নীতির মামলায় সাজার হার ছিল ৬৭ শতাংশের বেশি। এর আগে ২০২০ সালে সাজার হার ৭২ শতাংশ, ২০২১ সালে ৬০ শতাংশ, ২০২২ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের ফলে দুর্নীতির মামলার সাজার হার কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেড় যুগ আগে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় দুদকের করা হয়রানিমূলক মামলাগুলো থেকে গত এক বছরে অনেকেই খালাস পেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়ের হওয়া দুদকের বহু মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপির বেশকিছু রাজনীতিক। এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও হয়রানির জন্য দুদককে ব্যবহার করা হয় বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন।

২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন সরকার শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অসংখ্য রাজনীতিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগসহ অসংখ্য হয়রানিমূলক মামলা করে। পরবর্তী সময়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সরকার দলের রাজনীতিকদের মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। কিন্তু খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটির বহু নেতা দুদকের মামলা থেকে খালাস পান। ওই সব অধিকাংশ মামলা ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে দুদক দায়ের করে। খালাস পাওয়াদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহমুদুর রহমানও রয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাবেক চিফ হুইপ ও চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি নেতা ও এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব সাবেক ছাত্রদল নেতা মিয়া নুরউদ্দিন আহমেদ অপুসহ আরও অনেকে দুর্নীতির মামলার থেকে খালাস পান।

অন্যদিকে, এ সময়ে দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় খালাস পান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন ভ্ূঁইয়া। এ ছাড়া হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ মিয়া, বিতর্কিত ব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরও খালাস পেয়েছেন।

ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে মামলায় বিচারিক আদালতে খালাস : অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় গত ২২ জুন খালাস পান বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল এ মামলা করে দুদক। তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলা থেকে ২০ মে খালাস পান এনটিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু। ২০০৭ সালের ৮ জুলাই এ মামলাটি করা হয়।

এদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলা থেকে গত ২৫ মার্চ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা বরকতউল্লা বুলু। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি এ মামলা করা হয়।

খাগড়াছড়ির বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এক মামলায় ২০ বছরের দ- হয়েছিল। ২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুদকের করা এ মামলা থেকে সম্প্রতি উচ্চ আদালত তাকে খালাস দেন।

এদিকে, ২০০৭ সালে দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ সব মামলা থেকে খালাস পান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান। এ ছাড়া নাইকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান খালেদা জিয়া।

যদিও ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে দুর্নীতিসহ অন্যান্য অভিযোগে কেবল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই ১৫টি মামলা বাতিল করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের মামলাগুলো বিষয়ে একটি কমিটি করে। ওই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের সব মামলা ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ উল্লেখ করে প্রত্যাহার করা হয়।

অপরদিকে, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় খালেদা জিয়া এবং বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৪টি এবং ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করে। তাদের এসব মামলাসহ বিএনপির নেতাদের মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের গঠিত ওই কমিটিতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তখন কোনো ফল আসেনি। সরকারি কমিটি শুধু শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোই প্রত্যাহার করে।

মামলার সাজার হার কমে যাওয়া এবং খালাস বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ঢাকা জজকোর্টে দায়িত্বরত দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘দুদক নথিপত্রের বাইরে কোনো মামলা করে না, তদন্ত কর্মকর্তা এবং আদালতে দুদকের দায়িত্বরত পিপিদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও সময়ের পরিবর্তনে কিছু ক্ষেত্রে মামলায় খালাস হয়ে যায়, এটা সবারই জানা। আমরা প্রত্যাশা করি, তদন্ত কর্মকর্তা এবং পিপিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতে সব মামলায় সফলতা আসবে, এই প্রত্যাশা রাখি।’

তবে দুদকের সাবেক ডিজি (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) মঈদুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দুদকের মামলায় এক ধরনের চাপ পড়েছে, মামলাগুলোর বিভিন্ন জাজমেন্টে তা দেখা গেছে। শুধু এই সরকার পরিবর্তনই নয়, বিগত সময়ে বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই সময়ও দেখা গেছে হাইকোর্টে থেকে তাদের মামলাগুলো কোয়াশ করা হয়েছিল। এবারও আমরা এমনই দেখলাম বিচারিক আদালতে বহু মামলায় খালাস হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের করণীয় সম্পর্কে সাবেক এই জেলা জজ মঈদুল বলেন, ‘এখন দুদকের উচিত, যেসব মামলায় আসামি খালাস পেয়েছেন, সেসব মামলার মেরিট দেখে উচ্চ আদালতে আপিল করা। একই সঙ্গে কমিশনের উচিত, মামলায় হেরে যাওয়ার পেছনে তদন্ত কর্মকর্তার কোনো ধরনের দুর্বলতা বা গাফিলতি রয়েছে কি না, কিংবা পিপি সাহেবদের কোনো ভুল বা দুর্বলতা রয়েছে কি না- সেসব কারণ খুঁজে বের করা।’

মন্তব্য করুন


Link copied