নিউজ ডেস্ক: ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট- এমন পরিকল্পনা মাথায় রেখে নির্বাচনের ক্যালেন্ডার বা সময়সূচি সাজিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি আগস্ট থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনায় কী কী থাকছে- এর বিস্তারিত তুলে ধরা হবে ইসির রোডম্যাপে। এরই মধ্যে রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার রোডম্যাপ ঘোষণা করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোডম্যাপ ঘোষণা হলে কমিশন এক ধরনের জবাবদিহিতার মধ্যে চলে আসবে। রাজনৈতিক দল, ভোটার, গণমাধ্যম সবার কাছে রোডম্যাপ থাকলে ভোটের আয়োজনটা দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন তারা।
ইসির লক্ষ্য অক্টোবরের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে তফসিলের জন্য সবকিছু প্রস্তুত রাখা। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তফসিল থেকে ভোটের পরের ১৫ দিন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বদলির কর্তৃত্ব ইসির হাতে থাকবে।
ইসির সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলছেন, অক্টোবরের মধ্যে মূল প্রস্তুতির কাজ অর্থাৎ সীমানা নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার, আচরণবিধি জারি, ভোটার তালিকাসহ সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিতে প্রয়োজনীয় অ্যাপসহ আনুষঙ্গিক কাজ এবং তরুণ ভোটারদের নিয়ে সম্পূরক ভোটার তালিকার কাজ নভেম্বরে শেষ হবে।
আগামী নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা সমস্যা দেখছেন না এই কমিশনার। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস যখন সবাই নির্বাচনমুখী হব, তখন যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারাও একটা ভালো ভূমিকা পালন করবেন। তখন সবার চিন্তা থাকবে কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়। তখন স্বাভাবিকভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি দৃশ্যমান হবে।
এদিকে রোডম্যাপ ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, রোডম্যাপ ঘোষণায় ইসি আগেই কাজ শুরু করেছে। ইসি কোন কাজ কবে শেষ করতে চায়, রোডম্যাপে তার উল্লেখ থাকবে। রোডম্যাপ সামনে থাকলে রাজনৈতিক দল, ভোটার, গণমাধ্যম সবার কাছে নির্বাচনের বার্তা যায়। সঙ্গতকারণেই রোডম্যাপ ঘোষণা হলে দায়বদ্ধতাও সৃষ্টি হবে।
রোডম্যাপে উল্লেখ থাকবে, তফসিল ঘোষণা ও ভোটানুষ্ঠানের আগে-পরে করণীয়। কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো তফসিল ঘোষণার আগেই নিষ্পত্তি হতে হবে। সেগুলোর কোনো কোনোটির কাজ এরই মধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মাসভিত্তিক কর্মপরিকল্পনায় দেখা গেছে, সংসদীয় আসনের সীমানা সংক্রান্ত দাবি-আপত্তি ২৭ আগস্টের মধ্যে শেষ হয়ে চূড়ান্ত সংসদীয় আসন প্রকাশ চলতি মাসেই শেষ হতে পারে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রমের যাচাই-বাছাই পর্ব ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে সেপ্টেম্বরে, চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ সংশোধনী প্রস্তাব ও সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপজেলা ও থানাভিত্তিক অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) সম্পন্ন হতে পারে। দেশি-বিদেশি নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন নেওয়া হয়েছে, এখন যাচাই-বাছাই চলছে।
তফসিল ঘোষণার ন্যূনতম ১০ দিন আগে, অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের আসনভিত্তিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা এবং সারাদেশে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজ ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রস্তাবনা স্থান পেয়েছে রোডম্যাপে।
নির্বাচন আয়োজনে তফসিল ঘোষণার সাত দিন আগে নভেম্বরের শেষ দিকে হেলিকপ্টার টেক অব ও ল্যান্ডিংয়ের স্টেশন নির্দিষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে অনলাইন মনোনয়নপত্র সম্পন্ন করা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত অ্যাপ, সফটওয়্যার, প্রোগ্রাম প্রস্তুত ও ব্যবহার উপযোগী করার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমাদানসংক্রান্ত ইসির ওয়েবসাইটও একই সময়ের মধ্যে উন্মুক্ত করা হবে।
নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ের সক্ষমতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। নির্বাচনী সরঞ্জামাদির মজুদ, পরীক্ষা ও চাহিদা নিরূপণ করে অবহিত করার জন্য জেলা নির্বাচন অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হবে তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে অর্থাৎ মধ্য নভেম্বরে।
প্রতীক বরাদ্দের পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাসহ ব্যালট মুদ্রণের জন্য জানুয়ারির শেষ দিকে ১৫ দিন সময় রাখা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার এক মাস আগে অক্টোবরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়াল, নির্দেশিকা, পোস্টার, পরিচয়পত্র ইত্যাদি মুদ্রণ করার কথা উল্লেখ আছে। অনলাইন নিবন্ধন অ্যাপ ও পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টি নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পরপরই প্রবাসীদের ব্যালট পাঠানো হবে, যেখানে শুধু নিবন্ধিত দলের প্রতীক থাকবে কিন্তু প্রার্থীর নাম থাকবে না। প্রতীক চূড়ান্ত হওয়ার পর শুধু নিবন্ধিত প্রবাসীরাই পছন্দের প্রতীকে ভোট দিয়ে ডাকযোগে ব্যালটটি পাঠিয়ে দেবেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে। তাই রোজার অন্তত এক বা দুই সপ্তাহ আগে ভোট সম্পন্ন করতে চায় ইসি। ইসির ভাবনায় এবার সর্বাধিক দল ও ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তাই ভোটের পরদিন যেন সরকারি ছুটি থাকে, সেটিও রয়েছে পরিকল্পনায়। সেক্ষেত্রে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি বা ১২ ফেব্রুয়ারি নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারিতে ভোটানুষ্ঠানের সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে ৮ ও ১০ ফেব্রুয়ারি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।