আর্কাইভ  শনিবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ২৯ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সাবেক দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিশেষ আশীর্বাদেই সুবিধা পান মাফিয়া মিঠু

সাবেক দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিশেষ আশীর্বাদেই সুবিধা পান মাফিয়া মিঠু

রংপুরে অনলাইন জুয়ায় টাকা হেরে যুবকের আত্মহত্যা

রংপুরে অনলাইন জুয়ায় টাকা হেরে যুবকের আত্মহত্যা

গাইবান্ধায় ট্রেনের বগি বিচ্ছিন্ন, অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

গাইবান্ধায় ট্রেনের বগি বিচ্ছিন্ন, অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

বুড়িমারী স্থলবন্দরে বাংলাদেশী দুই টাকার নতুন নোট জব্দ

বুড়িমারী স্থলবন্দরে বাংলাদেশী দুই টাকার নতুন নোট জব্দ

সাবেক দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিশেষ আশীর্বাদেই সুবিধা পান মাফিয়া মিঠু

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, দুপুর ১১:১৪

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্যখাতের যেকোনো অনিয়মের গোড়া খুঁজতে গেলেই অবধারিতভাবে চলে আসে বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর নাম। তিন দশক ধরে এই খাতের সর্বত্র তার অদৃশ্য জাল ছড়ানো। যা দিনে দিনে আরও পোক্ত হয়েছে আর মিঠু হয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।

 
২০১৬ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক মিঠুর অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধান চালায়। একই বছরের ১০ মে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বনানী থানায় মিঠুর বিরুদ্ধে একটি ‘নন-সাবমিশন’ মামলা করেন। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর রহস্যজনক কারণে মামলার কার্যক্রম থেমে যায়! আর যার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
 
ইকবালের ভাই সাদিক মাহমুদ বকুলের সাথে মিঠুর ব্যবসা ছিল। মূলত ইকবালের হয়ে ব্যবসাগুলো দেখাশোনা করতেন তার ভাই। দুদক থেকে বাঁচিয়ে দেবার কারণে মিঠু মোটাঅঙ্কের টাকা দিয়ে রাজধানীর বাড়িধারায় দু'টি ফ্ল্যাট কিনে দেন।
 
এদিকে বুধবার রাতে দুদকের একটি মামলায় মিঠুকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।
 
সূত্র বলছে, সেসময় দুদক মিঠুকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে নোটিশ দিলেও তাতে সাড়া দেননি তিনি। এই ঘটনায় সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন হলেও দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তাকে রক্ষা করেন।
 
দুদক আইন বলছে, নোটিশ পাওয়ার পর কোনো ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট ফরমে তার সম্পদের হিসাব জমা না দেন, তাকে তিন বছরের সাজা পেতে হবে। এর জন্য ওই ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে না।
 
সাধারণত, কোনো ব্যক্তিকে নোটিশ দেওয়ার পর দুদক তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হিসেবে তার দেয়া তথ্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এমনকি তার বিরুদ্ধে সব ধরনের অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে। কিন্তু সম্পদের হিসাব দাখিল না করা ব্যক্তির ব্যাপারে এসব করতে হয় না। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সোজা আদালতে গিয়ে ‘নন সাবমিশন’ মামলা করতে পারেন। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(১) ধারায় কোনো ব্যক্তিকে নোটিশ দিয়ে থাকে দুদক। এই ধারার বিধান মতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তার সম্পদের হিসাব দাখিল না করেন, তাহলে তিন বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। অনেকের শাস্তিও হয়েছে এ ধারায়।
 
তবে এখানে উল্লেখ করার বিষয় হলো, দুদক অনেক ক্ষেত্রেই ‘নন সাবমিশন’ মামলা করেই ওই ব্যক্তির বিষয়ে কার্যক্রম শেষ করে। কিন্তু তাকে নোটিশ জারির আগে বিধি মোতাবেক তার যে অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়ে নোটিশ দেয়া হলো সেই সম্পদের বিষয়ে মামলা খুব কম হয়ে থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিঠুকে অনৈতিক সুযোগ করে দেয় তৎকালীন চেয়ারম্যান।
 
কে এই মিঠু?
মিঠুর গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর ইউনিয়নে। তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মালিক। এর বাইরেও বেনামে রংপুরসহ দেশের আরো তিনটি হাসপাতালের মালিকানা রয়েছে মিঠুর কব্জায়। ২০১৬ সালে বিশ্ব তোলপাড় করা পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যে ৩৪ বাংলাদেশির নাম উঠে এসেছিল, তাদের একজন এই মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। দেশ থেকে যিনি হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তিনি প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মালিক বলে বিভিন্ন সময়ে জানা গেছে। ২০২৩ সালে মিঠুর ৫০০ কোটি টাকার অবৈধসম্পদ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মিঠু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এবং দেশের বাইরে যেমন— আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছে। তাছাড়া উত্তরা, গুলশান, বনানী, রংপুরে রয়েছে তার বিলাসবহুল বাড়ি এবং জমি।
 
এদিকে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থপাচার, জাল-জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতিসহ বহুমাত্রিক অপরাধের অভিযোগ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালেই ইকবাল মাহমুদ কানাডার বেগমপাড়ায় গড়েছেন বাড়ি। দুদক চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার পর বেনামে করেন বিপুল সম্পদ। সাভারে রয়েছে বিশাল বাড়ি।
 
ইকবাল মাহমুদ দুদকের চেয়ারম্যান থাকাকালে তার ছোট ভাই বকুল রাজধানীর বনানীর ‘আমিনা প্যালেস’ (ফ্ল্যাট-২এ, প্লট-১৩৯, রোড-৪, ব্লক-‘এ’, বনানী, ঢাকা-১২১৩)— এ বিকল্প ‘দুদক অফিস’ খুলে বসেন। ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে তার মূল কাজই ছিল দুদকে তদবির। রাত যত গভীর হতো এখানে বেড়ে যেত রহস্যময় ও বহুরূপী মানুষদের আনাগোনা। ইকবাল মাহমুদ দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে রাজউক থেকে প্রাপ্ত উত্তরার প্লটে নির্মাণ করেন বহুতল ভবন। যেখানে সরকারি চাকরিজীবী রাজউক থেকে একাধিকবার সুবিধা নেয়া বেআইনি। কিন্তু ইকবাল মাহমুদ গুলশান অ্যাপার্টমেন্ট ভবন-২ (ভবন-২) ১৬টি ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য আবেদন করে। লটারিতে নির্বাচিত আবেদনকারীদের নাম ও ফ্ল্যাটের তালিকায় ৩২ নম্বরে ছিল ইকবাল মাহমুদের নাম। একেকটি ফ্ল্যাটের আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট।

মন্তব্য করুন


Link copied