আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫ ● ১১ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫
রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

তদন্ত হবে আড়ি পাতার

রাজনৈতিক সরকার এ ব্যবস্থা ধরে রাখতে চায়
তদন্ত হবে আড়ি পাতার

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

তেঁতুলিয়ায় ফুটেছে টিউলিপ, অভিভূত চাষিরা

সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২, সকাল ০৯:৩৯

Advertisement Advertisement

ডেস্ক: উত্তরের হিমালয় কন্যাখ্যাত শীত প্রধান জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ফুটেছে টিউলিপ। শীত প্রধান দেশের এই ফুল বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চাষ করছেন ক্ষুদ্র চাষিরা। বেশ কয়েক মাসজুড়ে এই জেলায় শীতার্ত আবহাওয়া বিরাজ করে বলে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জেলায় বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করা সম্ভব। ফলে তেতুলিয়ায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে টিউলিপ। 

দেখতে অনন্য সুন্দর আর প্রায় দেড় শতাধিক প্রজাতির টিউলিপ ফুল সাধারণত পৃথিবীর শীত প্রধান দেশগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। ন্যূনতম ১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই ফুল ওই দেশগুলোতে উৎপাদন হয় বাণিজ্যিক আকারে। টিউলিপের বাগান দেখতে ভিড় করে দেশ বিদেশের হাজারো পর্যটক। শীতকালে বাংলাদেশে এই ফুলের চাষের সম্ভাবনার কথা আগে জানা গেলেও এবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় শুরু হয়েছে প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে টিউলিপ চাষ। পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ উৎপাদনের এই উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। 
প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশান। গত পহেলা জানুয়ারিতে উপজেলার দর্জিপাড়া এবং সারিয়াল জোত গ্রামের ৮ জন চাষি টিউলিপের বাল্ব বা বীজ রোপন করেন। তারা ৪০ শতক জমিতে ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার টিউলিপের বীজ বপন করেন। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করলেও বর্তমানে টিউলিপ ফোটা শুরু হয়েছে বাগানে। টিউলিপের হাসি দেখে চাষিরা অভিভূত। সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তারা। ইএসডিওর নারী সদস্য ও উদ্যোক্তারা টিউলিপ চাষ করছেন। 

সারিয়ালজোত গ্রামের আয়শা আক্তার জানান, টিউলিপ ফোটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমি ৫ শতক জমিতে ৫ হাজার চারা লাগিয়েছি। ইএসডিও সহযোগিতা করেছে। ফুল ফোটায় আমি অভিভূত। শুধু অর্থ নয় ফুল চাষ আনন্দও দেয়। তাই সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে আমি পরের বছর আরও বেশি করে টিউলিপ চাষ করবো। 

২৫ থেকে ২৮ দিনের মাথায় ফুল ফোটার কথা থাকলেও তেঁতুলিয়ায় ২৩ দিনের মাথায় টিউলিপ ফোটা শুরু করেছে। ৬ প্রজাতির টিউলিপ ছয় রং ধারণ করে প্রস্ফুটিত হতে শুরু করেছে। বর্তমানে বেগুনি রংয়ের টিউলিপ ফোটা শুরু করেছে। এরই মধ্যে নানা এলাকা থেকে টিউলিপ দেখতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ আল আমিন জানান, আমি শুনেই ছুটে এসেছি দেখতে। আমি বিষ্মিত। তেঁতুলিয়ায় সরাসরি টিউলিপ দেখবো কখনো ভাবিনি। এর আগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিউলিপের ছবি এবং ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
 
ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, টিউলিপ ঠান্ডার দেশের ফুল। যেখানে যতো বেশি ঠান্ডা সেখানে এই ফুল ভালো ফোটে। শীতকালে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকে। তাই এখানে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তারা। সুইজারল্যন্ড থেকে টিউলিপের বাল্ব কেনেন তারা। প্রতিটি বাল্ব বা বীজ প্রায় ৬৫ টাকা মূল্যে কেনা হয়। প্রথমবারেই ফুল ফোটায় তারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিক আকারে টিউলিপ চাষ সম্ভব। কারণ টিউলিপ চাষ করতে ৮ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। এর বেশি হলে টিউলিপ সাধারণত হয় না। মূলত ক্ষুদ্র চাষিদের সহযোগিতা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য তারা টিউলিপ চাষে উদ্যোগী হয়েছেন।ভবিষ্যতে টিউলিপ চাষ আরও সম্প্রসারিত করতে চান তারা। 

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে টিউলিপ চাষ আমরাই প্রথম শুরু করলাম। তেঁতুলিয়া একটি পর্যটন এলাকা। টিউলিপ চাষ এই এলাকার পর্যটনকে আরও এগিয়ে নেবে। সেই সাথে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও ঘটবে। আমরা টিউলিপের বাজারজাত করণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। কিছু ফুল ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে আমাদের টিউলিপ কেনার জন্য যোগাযোগ করছেন। আমরা শুধু টিউলিপ নয় দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ফুলগুলোও তেঁতুলিয়ায় চাষ করতে চাই।
   
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে টিউলিপ চাষ করে তেঁতুলিয়ায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। শীতকালের তাপমাত্রায় এই এলাকায় বাণিজ্যিক আকারে টিউলিপ চাষ করা সম্ভব। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছি। অন্য কেউ উদ্যোগী হলে আমরা সহযোগিতা করবো।

টিউলিপ মূলত বর্ষজীবী ও শীতপ্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। এটি মুকুল থেকে জন্মায়। পৃথিবীর শীত প্রধান অঞ্চলগুলোতে টিউলিপ বাগানে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখলে ফুলটির অনন্য সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে । বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বাণিজ্যিক চাষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। সংবাদ ও ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন

মন্তব্য করুন


Link copied