আর্কাইভ  শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫ ● ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

খোকা, মিয়াভাই থেকে মুজিব ভাই , বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা অতঃপর বিশ্বনেতা

বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২, দুপুর ১২:৩৩

Advertisement

শেখ মাজেদুল হক

  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।’-আহমদ ছফা

আজ ১৭ ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। সবুজের ছায়াঘেরা গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। গ্রাম বাংলার চিরায়ত বয়ে চলা নদী, হিজলের বন, পাখির কিচিরমিচির-নদীর কলকল ধ্বনি আর ভেজা বাতাস, সব মিলিয়ে শান্ত, স্নিগ্ধ নিরিবিলি পরিবেশ। সেখানেই শতবছর আগে এই দিনে জন্মেছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বাবা-মাডাকতেন খোকা বলে। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। জন্মের পর নানা শেখ আবদুল মজিদ তার নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর মাকে বলেন, ‘মা সায়েরা, তোর ছেলের এমন নাম রাখলাম যে নাম জগৎজোড়া খ্যাত হবে।’ পরবর্তীতে তার কথার প্রতিটি অক্ষর সত্য হয়েছে। শিশু থেকে দুরন্ত কৈশোর। মধুমতী নদীতে সাঁতার কেটে টগবগে যুবকে পরিণত হয় খোকা। যিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’। তার হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ সৃষ্টির মহানায়ক। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গি-পাড়ায়।১৯৩৮সালের ১৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এর জনক-জননী। 

পরিবারে ‘খোকা’ নামে পরিচিত ছেলে যে একদিন বিশ্বনন্দিত নেতা হবেন কিংবা স্বাধীনতায় নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ত্রাণকর্তা হবেন, তা কেউ হয়তো ভাবেননি। সেই তিনিই গভীর দেশপ্রেম, সীমাহীন আত্মত্যাগ ও অতুলনীয় নেতৃত্বে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তার বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলার শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে নেতৃত্বের জন্য জনগণ তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে, পরে তাকে জাতির পিতার অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দেন। বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। প্রতিটি বাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরাধীনতার শেকল ভাঙার মন্ত্র। এর ভেতর দিয়ে তিনি আবির্ভূত হন বাঙালির মুক্তির মহানায়ক হিসেবে।

৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। … একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। … জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।

স্বনামধন্য লেখক আহমদ ছফা শেখ মুজিবুর রহমান নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।’

 মুজিব ভাই  নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন বন্ধু, নেতাকর্মী সবার কাছে। ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবরণ করেন তিনি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাবার পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের এক বিশাল জনসভায় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ তাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এদিন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানালেন। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ একটানা নয় মাস চলে যুদ্ধ। নয় মাসের যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন জাতির জনক। জাতির জনকের জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

email: smh.mkt@brur@ac.bd 

মন্তব্য করুন


Link copied