আর্কাইভ  শুক্রবার ● ৪ জুলাই ২০২৫ ● ২০ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ৪ জুলাই ২০২৫

উজানের ঢলে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী॥ বাঁধ বিধ্বস্থ্য

সোমবার, ১ আগস্ট ২০২২, বিকাল ০৫:২৬

Ad

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী॥ ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদী ফুঁসে উঠেছে। এতে সোমবার (১ আগষ্ট) সকাল সারে ১০টার দিকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বাম তীরের চরখড়িবাড়ি এলাকার দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বালুর বাঁধের ১০০ মিটার বিধ্বস্থ্য হয়েছে। বিধ্বস্থ্য বাঁধের ভেতর দিয়ে নদীর পানি চরে প্রবেশ করায় সেখানকার প্রায় দেড়শতাধিক বিঘার আমন ধান ক্ষেত তলিয়ে যেতে শুরু করেছে বলে চরের কৃষকরা জানিয়েছে। এ ছাড়া নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধ ঘেষে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেখানকার ৫০ বিঘা চমির আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি হুহু করে বেড়েই চলেছে।
এদিকে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা জানান। তিনি বলেন সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার (৫২.৬০) দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বেলা তিনটায় বিপদসীমা অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবহিত হচ্ছিল ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল ।
ভারতীয় অংশের তিস্তা নদীর ওয়েব সাইড ঘেটে জানা যায় সোমবার ভোর ৪টা থেকে তিস্তা নদীর পানি দো-মহনী পয়েন্টে বিপদসীমা (৮৫.৯৫) অত্রিম করে। যা সকাল ৭টায় বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার (৮৬.১৮) উপর দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। তবে দুপুর ২টায় দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি কমে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভারতের সেই পানি বাংলাদেশের ডালিয়া পর্যন্ত ধেয়ে আসতে প্রায় ৭ ঘন্টা সময় লাগে। সে হিসাবে সেই ঢল প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের কালিগঞ্জ হিরো পয়েন্ট দিয়ে।
এদিকে উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। অবশ্য ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল নেমে আসায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে  তিস্তা নদী।
চরখড়িবাড়ি এলাকার মানুষজন জানায় বামতীরে যে বালির বাধটি রয়েছে সেটি তারা স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরী করেছিল ৫ বছর আগে। ওই বাঁধ টিকিয়ে রাখার জন্য ইউপি চেয়ারমান ময়নুল হক বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ গত কয়েকদিন ধরে প্রভাবশালীরা ওই বালির বাঁধ ঘিরে বোমা মেশিন বসিয়ে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করায় উজানের ঢলে আজ বাঁধটির ১০০০ মিটার বিধ্বস্থ্যহলো। এলাকাবাসী প্রভাবশালীকে চিহিৃত করে তার বোমা মেশিন জব্দ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেছে। এ ব্যাপারে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মঈনুল হক জানান, উজানের ঢল ও নদীর পানি বাম তীরে চাপ বেশী থাকায় বালির বাঁধটি বিধ্বস্থ্য হয়েছে।
অপর দিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ২২টি চর প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন জানান তার এলাকার প্রায় ৭০০ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। খগাখড়িবাড়ি এলাকায় সারে ৩শত পরিবার, টেপাখড়িবাড়ি এলাকায় হাজার পরিবার, খালিশাচাঁপানী এলাকায় ৪০০ পরিবার, ঝুনাগাছ চাপানী এলাকার সারে ৩০০ পরিবারের বসত ভিটা তলিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষনট জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে। বিশেষ করে খালিশাচাঁপানী এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মানুষজন আতংঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
ভেন্ডাবাড়ি এলাকার জলিল মিয়া জানিয়েছেন, নদী ভাঙনে ভিটেমাটি সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে নদীর পানির স্রোত সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভিটেমাটি আর ঘরবাড়ি হারিয়ে ভেন্ডাবারী এলাকার মনজিলা বেগম  জানিয়েছেন, আমার একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই নিয়া আসতে পারি নাই। স্রোতে সব ভেসে গেল।

মন্তব্য করুন


Link copied