আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

তিস্তা নিয়ে ভারত-চীন প্রতিযোগিতা

বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, দুপুর ১০:১৭

Advertisement Advertisement

আন্তঃসীমান্ত তিস্তা নদী ড্রেজিং করে এর উন্নয়ন ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। এই ইস্যুটি  এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে উঠেছে। ভারতের হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা লিখেছেন সাংবাদিক রেজাউল এইচ লস্কর।

তিনি ওই প্রতিবেদনে আরও লিখেছেন, ঢাকার পরিকল্পিত ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিস্টোরেশন’ প্রজেক্টের দিকে কয়েক বছর ধরে দৃষ্টি রয়েছে বেইজিংয়ের। এর আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দিয়েছে বেইজিং। ভারতও আন্তঃসীমান্ত নদীর গুরুত্ব বিবেচনায় এই কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসিনা নতুন করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত ও চীনের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে জানেন অথচ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন সূত্র এই তথ্য দিয়েছেন। বিশাল এই প্রকল্পের কাজ কে পাবে অথবা কখন এর কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এখনো কাউকে ডাকেনি।

৩০শে এপ্রিল অনন্ত সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে তিস্তা প্রকল্পে ভারত ও চীনের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এখনো নয়াদিল্লি থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পায়নি ঢাকা। বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি বলেন- চীনের প্রস্তাব সম্পর্কে আমি অবহিত। 

ভারতের প্রস্তাব সম্পর্কে আমি কোনো আনুষ্ঠানিকতার কথা জানি না। যখন এই প্রস্তাব দেয়া হবে, তখন আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেবেন এবং এর কার্যকারিতা ও অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখবেন।  উপরে উল্লিখিত সূত্রটি বলেছেন, যদিও ভারতীয় পক্ষ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দেয়নি, তবু বেশ কিছু মিটিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। উল্লিখিত সূত্রের একজন বলেছেন, কৌশলগত এবং নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে আমরা চাই না যে, এই প্রকল্পটি সুনির্দিষ্টভাবে চীনকে দেয়া হবে।  চীনকে এমন বড় বড় যেসব প্রকল্প দেয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন করেছে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। চীনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য পানি প্রবাহের যে ডাটা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ আছে ভারতের। বাংলাদেশে প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প চীনা কর্মকর্তাদের শিলিগুঁড়ি করিডোরের কাছে উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। শিলিগুঁড়ি করিডোর কথিত ‘চিকেন নেক’ হিসেবে পরিচিত। এটি হলো একটি সংকীর্ণ উপত্যকা, যা ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করেছে। এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়ে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশকে চীনা কূটনীতিকদের চাপ দেয়ার দিকেও ভারতের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে চীনা দূত ইয়াও ওয়েন একটি ঘোষণা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, তিস্তা অববাহিকা উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব পেয়েছে বেইজিং। ২০২২ সালের অক্টোবরে তার পূর্বসূরি লাই জিমিং লালমনিরহাট জেলার তিস্তা ব্যারেজ পরিদর্শন করেন এবং বলেন, চীনা ইঞ্জিনিয়াররা এই নদী ড্রেজিং করার সম্ভাবতা যাচাই করছেন এবং এ প্রকল্প সম্পন্ন করার সময়সীমা নির্ধারণ নিয়ে গবেষণা করছেন।  ইয়াও-এর মন্তব্যের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন যে, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ঢাকা ভূরাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে বিবেচনায় নেবে। গত বছর নয়াদিল্লি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেছেন, তিস্তায় বাংলাদেশ অংশে যেকোনো কাজ করতে ভারতের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন নেই বাংলাদেশের।

 উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত যে ৫৪টি নদী আছে, তার মধ্যে তিস্তা অন্যতম। এটি একটি মাত্র নদী, যেখানে দুই পক্ষ এখনো পানি বণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তিতে আসতে পারেনি। ২০১১ সালে এই নদীর পানি বণ্টন নিয়ে একটি চুক্তি করার কথা ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আর হয়নি। ভারতের সংবিধানের অধীনে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি করতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারের সম্মতি বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগ, এই চুক্তি করা হলে পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে খরা দেখা দেবে।  ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী বাংলাদেশ। এই সুবিধা পেয়েছে সংযুক্তি বা কানেক্টিভিটির মাধ্যমে। যার ফলে জ্বালানি, সড়ক ও রেল সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ভারত ও চীন থেকে উন্নয়ন গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে একটি সতর্ক ভারসাম্য বজায় রেখেছে। কোয়াডে ভারতের অংশীদার জাপান। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রচেষ্টা ঘনিষ্ঠভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের দৃষ্টি রয়েছে চীনের ওপর। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বাংলাদেশকে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে জাপান। যাতে একটি নতুন শিল্পমূল্যভিত্তিক চেইন সৃষ্টি করা যায় এবং তাতে উপকৃত হয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো।  

মন্তব্য করুন


Link copied