ডেস্ক: উত্তরের জেলা রংপুরের অর্থনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে আঁশবিহীন সুস্বাদু আম হাঁড়িভাঙা। চলতি মৌসুমে আমটির বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। গত মৌসুমেও এই আমের বাজার ছিল ১৫০ কোটি টাকার বেশি। প্রতিনিয়তই বাড়ছে এই আমের বাজার।
রংপুর কৃষি বিপণনের তথ্য বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে। কারণ আমের আকার ছোট।
হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এর আঁটিও খুব ছোট। খোসা পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।
জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এ মৌসুমে গোটা জেলায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হবে।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয়ের সহকারী কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এ বছর আমের ফলন কিছুটা কম। এর অন্যতম প্রধান কারণ বৈরী আবহাওয়া। তবু আমাদের ২০০ কোটি টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা রয়েছে। আমের হারভেস্ট শেষ হলে চূড়ান্ত হিসাব দিতে পারব।’
গত সোমবার রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ক্যারেট ভর্তি আম নিয়ে হাটে আসছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ সাইকেলে করেও আম নিয়ে এসেছেন। তবে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতা কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আসা আম অনুপাতে দাম নেই। আম বাগানি ফুয়াদ মিয়া বলেন, ‘এবার বাগানত খরচা বেশি গেছে। কিন্তু কাস্টমার সে হিসাবত দাম কয় না।’
গত সোমবার পদাগঞ্জ বাজারে পাইকারিতে বড় পাকা আম গড়ে প্রতি মণ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বড় কাঁচা আম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। পাকা মাঝারি আম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। আর ছোট আম বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই নাখোশ এই দামে। ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি আর বিক্রেতারা বলছেন দাম কম।
রংপুরের রানীগঞ্জ থেকে শাহীন নামের এক বাগানি বিক্রির জন্য পদাগঞ্জ হাটে নিয়ে এসেছেন ২০ ক্যারেট আম। তিনি বলেন, ‘দুই-তিন দিন ধরি আমের দাম কম। আগত বাজারত এত আম ছিল না, ওই জন্য দাম একনা বেশি পাইছিলং। এলা বাজারত আম বেশি, সবার আম একসাথে পাকছে। আর সবাই এক সাথত আনছে, ওই জন্যে হাটত আম বেশি আর দাম কম।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর রংপুর জেলায় তিন হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের আবাদ হয়েছে এক হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘এ মৌসুমে যখন হাঁড়িভাঙা আমের মুকুল আসে, ঠিক সে সময় বৃষ্টির কারণে আমের মুকুলের ক্ষতি হয়। আবার পরে একটা দীর্ঘ খরা ছিল। এ জন্য এই অঞ্চলে হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে। তবে মৌসুম শেষ হলে আমরা পূর্ণাঙ্গ হিসাব দিতে পারব।’
পদাগঞ্জের এই হাট চলে ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। হাটে যেমন খুচরা আম বিক্রি হয়, তেমনি বিক্রি হয় পাইকারিও। এখানে খুচরার চেয়ে পাইকারি বিক্রি বেশি। এই আম চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে। সরকারি নির্দেশনামতো হাটে হাঁড়িভাঙা ২০ জুন থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে কমপক্ষে আরো ২০ দিন। প্রতিদিন এই হাটে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই কোটি টাকার আম।
হাটের ইজারাদারদের একজন ফেরদৌস আলী ফদ্দু মিয়া বলেন, এই হাটে দোকানভেদে ২০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার পাইকারি আম বিক্রি হয়। সেই হিসাব করলে এখানে পাইকারি বড় দোকান আছে ২০টিরও বেশি। আর তারা গড়ে দুই কোটি টাকারও বেশি আম বিক্রি করে।