আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৫ ● ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৫
ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের দুজন নিহত, আহত ৪

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের দুজন নিহত, আহত ৪

সেঞ্চুরিতে শততম টেস্ট রাঙালেন মুশফিক

সেঞ্চুরিতে শততম টেস্ট রাঙালেন মুশফিক

কুড়িগ্রামে স্কুলের রাস্তায় স্থাপনা নির্মাণ, যেতে না পেরে গাছতলায় স্কুলের পাঠদান

কুড়িগ্রামে স্কুলের রাস্তায় স্থাপনা নির্মাণ, যেতে না পেরে গাছতলায় স্কুলের পাঠদান

পরকীয়ার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকা গ্রেফতার

পরকীয়ার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকা গ্রেফতার

শীতে ত্বকের যত্ন: শুস্ক মৌসুমে ত্বককে রাখুন সজীব

বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, দুপুর ১০:০২

Advertisement

সুবর্না সিকদার 
শীত নামলেই বাতাসে আসে শুষ্কতার ছোঁয়া।শীত মানেই একটু আরাম, একটু উষ্ণ পোশাক, আর সঙ্গে আসে ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজনীয়তা। আবহাওয়া যতই মনোরম হোক, শীতের রুক্ষতা কিন্তু ত্বকের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। বাতাসে আর্দ্রতার ঘাটতি, ঠান্ডা হাওয়া এবং রোদ—সব মিলিয়ে ত্বক তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করে। ফলে দেখা দেয় শুষ্কতা, টান ধরার অনুভূতি, রুক্ষ ভাব, খোসা ওঠা কিংবা অ্যালার্জির মতো সমস্যা। তাই শীত এলেই ত্বকের যত্নে সামান্য পরিবর্তন এনে দিলে ত্বক থাকে সজীব, নরম আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। তাপমাত্রা কমে গেলে বাতাসের আর্দ্রতা হ্রাস পায়, আর সেই সঙ্গে ত্বকের স্বাভাবিক তেল ও আর্দ্রতার ভারসাম্যও নষ্ট হয়। অথচ সামান্য সচেতনতা আর নিয়মিত যত্নই পারে শীতের এই চ্যালেঞ্জকে সহজ করে দিতে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই সময়টায় কীভাবে ত্বক রাখতে পারেন উজ্জ্বল, নমনীয় ও সুস্থ।

ত্বক কেন শীতে রুক্ষ হয়?
শীতের সময় আর্দ্রতা কমে যায়। বাতাস হয়ে ওঠে শুষ্ক। ফলে ত্বকের ওপরের প্রাকৃতিক তেল দ্রুত হারিয়ে যায়। ঠান্ডা বাতাসে বাইরে বের হলে ত্বকের ওপরের সুরক্ষা স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর ঘরের ভেতর গরম পরিবেশ ত্বককে আরও শুষ্ক করে তুলে। এসব কারণ মিলিয়েই শীতের ত্বক হয়ে ওঠে প্রাণহীন

ত্বক পরিষ্কারে কোমলতা জরুরি
অনেকেই মনে করেন বেশি করে ফেসওয়াশ বা সাবান ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার থাকবে। কিন্তু শীতকালে বারবার ধোয়া এবং কড়া ক্লিনজার ব্যবহার করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। তাই এসময় বেছে নিতে হবে সালফেট-মুক্ত, অতিরিক্ত ফোম না হওয়া ক্লিনজার। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে না এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে।

ময়েশ্চারাইজার—শীতের সবচেয়ে বড় বন্ধু
শীতে ত্বকের যত্ন বলতেই প্রথম যে নামটি আসে, তা হলো ময়েশ্চারাইজার। গোসলের পরপরই হালকা ভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগালে আর্দ্রতা অনেকক্ষণ ধরে রাখা যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন ক্রিম, লোশন বা বডি বাটার। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সিরামাইড, গ্লিসারিন, শিয়া বাটার বা ভিটামিন ই যুক্ত ময়েশ্চারাইজার বিশেষ কার্যকর।
যাদের অয়েলি স্কিন, তারাও শীতে জেলবেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন—কারণ তেলতেলে ভাব থাকলেও ত্বকের ভেতর আর্দ্রতার ঘাটতি থাকতে পারে।

শীতে ঠোঁটের যত্ন:
শীতে ঠোঁট সবচেয়ে দ্রুত শুষ্ক হয়। তাই লিপ বাম ব্যবহার করা অপরিহার্য। পেট্রোলিয়াম জেলি, শিয়া বাটার বা মৌমাছির মোমযুক্ত লিপ বাম দিনে কয়েকবার লাগাতে পারেন। রাতে শোয়ার আগে লিপ বাম–এর একটি স্তর ভালোভাবে ঠোঁটে লাগিয়ে নিলে খসখসে ভাব কমে যাবে।

গরম পানি নয়, ঈষদুষ্ণ পানি
শীতের দিনে গরম পানিতে গোসল করলে আরাম লাগলেও তা ত্বকের আর্দ্রতা অনেকটাই কেড়ে নেয়। তাই শীতে ঈষদুষ্ণ পানি ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো। গোসলের সময় খুব বেশি সময় না নেওয়াই উত্তম, কারণ দীর্ঘসময় পানিতে থাকলেও ত্বক শুষ্ক হয়।

সানস্ক্রিন এর উপকারিতা:
শীতের নরম রোদ খুব মিষ্টি লাগলেও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। ঠাণ্ডা বাতাসে রোদ কম মনে হলেও ইউভি রশ্মি কিন্তু ঠিকই থাকে। তাই বাইরে বের হওয়ার আধঘণ্টা আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। শীতে SPF 30–50 যে কোনো স্কিন টাইপের জন্য যথেষ্ট।

পর্যাপ্ত পানি পান করা:
শীতে অনেকের মধ্যেই পানি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। কিন্তু শরীর ও ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে ভেতর থেকে হাইড্রেশন অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৬–৮ গ্লাস পানি পান করুন। চাইলে লেবু-মিশ্রিত হালকা গরম পানি, হারবাল টি বা নারিকেল পানি খেতে পারেন।

শীতে প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাস:
ত্বকের যত্ন শুধু বাইরে থেকে নয়, ভেতর থেকেও জরুরি। শীতে ত্বকের শুস্কতা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যাভাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন প্রয়োজন। যেসব খাবার ত্বকের শুস্কতা বাড়িয়ে দেয় সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সঙ্গে ভিটামিন–সি সমৃদ্ধ ফল (কমলা, মাল্টা, আমলা), বাদাম, কাজুবাদাম, তিল, চিয়া সিড, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল—এসব খাদ্য ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি দেয়।
পর্যাপ্ত ঘুম:
পরিমিত ঘুম ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং এর প্রভাব সরাসরি ত্বকে পড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা ত্বকের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
 
শীতের ত্বক যত্নে নিয়মিততা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। খুব দামি পণ্য নয়—বরং নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত পণ্য বেছে নেওয়া এবং প্রতিদিনের রুটিন বজায় রাখাই ত্বককে শীতে সুন্দরভাবে রক্ষা করবে। একটু মনোযোগ, সঠিক যত্ন আর পর্যাপ্ত হাইড্রেশন—এসবেই শীতের দিনগুলোয় আপনার ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, নরম আর প্রাণবন্ত।
 
লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর। 

মন্তব্য করুন


Link copied