দীপ্ত চন্দ্র সরকার
দরজায় কড়া নাড়ছে শীতকাল। প্রকৃতিতে মৃদু হিমেল বাতাস এর সাথে ভোরের সবুজ ঘাসে জমা শিশিরবিন্দু এবং গোধুলীলগ্নে আবছা কুয়াশার উপস্থিতি জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। চারিদিকে শীত মোকাবেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বেশ জোরে সোরেই। শীতকালে সুস্থ থাকাটাই চ্যালেঞ্জের! এজন্য এখন থেকেই জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা জরুরি। তাই উষ্ণ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ঠান্ডার সমস্যা কিছুটা হলেও কম হবে। তবে আরামদায়ক থাকার জন্য আপনি উষ্ণ পানীয়তে চুমুক দিতে পারেন। নিচে রইলো কিছু পরামর্শঃ-
১। বাদাম দুধ
গরম বাদাম দুধ পান করলে তা শরীরকে ভেতর থেকে আরামদায়ক উষ্ণতা দেয়, যা শীতের ঠান্ডা মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে, যা দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে এবং শীতকালীন ক্লান্তি বা অলসতা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে।
বাদাম দুধ তৈরি করতে আপনাকে প্রয়োজন অনুযায়ী দুধ নিতে হবে। এছাড়া প্রয়োজন হবে ৭-৮টা বাদাম, সামান্য পরিমাণ জাফরান (কেশর) ও এলাচ। গরম বাদাম দুধ তৈরি করতে দুধ ফুটিয়ে তার মধ্যে বাদামগুলো বিট করে দিয়ে দিন। এর মধ্যে এলাচ যোগ করুন এবং এটিকে আবারও মৃদু আঁচে ফুটতে দিন। কিছুক্ষণ পরে নামিয়ে নিন। সবশেষে আপনাকে এতে জাফরান যোগ করতে হবে।
২। হলুদ লাটে
হলুদ দুধের কথা নিশ্চয়ই আমরা সবাই শুনেছি! আর এবার হলুদ দুধেরই লাটে পানের চেষ্টা করুন। এটি আপনার শরীরে উষ্ণতা অনুভব করাবে।
হলুদের প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো কারকিউমিন। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহরোধী) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কারকিউমিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, বিশেষ করে সর্দি, কাশি ও ফ্লু-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এটি তৈরি করতে আপনাকে নিতে হবে কাঁচা বা গুঁড়ো হলুদ, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, আদা, মধু, জায়ফল (ঐচ্ছিক) ও দুধ। এ সব উপদানগুলো একসঙ্গে ভালো করে জাল দিয়েই আপনি তৈরি করেত পারেন হলুদ লাটে।
শীতকালে সুস্থ থাকতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে হলুদ দুধ পান করা খুবই উপকারী অভ্যাস।
৩। গরম দুধের সঙ্গে মিষ্টি খেজুর
পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খেজুর শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য মারাত্মক কার্যকরী। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে, খেজুরের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ পাওয়া যায়। এর ফলে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতে খেজুরের জুড়ি নেই। এই পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খেজুরকে গরম দুধের সঙ্গে গুলিয়ে খেলে দুধের স্বাদ অনেকগুণে বৃদ্ধি পায়। শরীরকে উষ্ণ রাখার পাশাপাশি তা পুষ্টিও সরবরাহ করে থাকে।
৪। শাকসবজির স্যুপ
শীতকালীন সবজি যেমন ব্রোকলি, পালং শাক, টমেটো, শালগম, বীট, শিম, রাঙাআলু ও গাজরে ভিটামিন C, E, K এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে। স্যুপের মাধ্যমে এই উপাদানগুলো শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ শরীরকে উষ্ণ রাখতেও অত্যন্ত কার্যকর। শীতকালে জলপানের পরিমাণ কমে যায়। স্যুপের উচ্চ জলীয় অংশ এবং ইলেকট্রোলাইটস শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা শীতকালীন ক্লান্তি এবং মাথা ব্যথা দূর করতে সহায়ক। শাকসবজির স্যুপে সাধারণত ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে, ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায়, পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৫। লেবুর শরবত
লেবুর পুষ্টিগুণের কথা সর্বজনবিদিত। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরে চনমনে ভাব ফিরিয়ে আনতে লেবুর শরবতের জুড়ি নেই। তবে চিনি ছাড়া কেবল পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে বেশ কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়।
এক গ্লাস পানিতে একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিলে ১৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ৬৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ছাড়াও মিলবে প্রোটিন, ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট। এটি শরীরকে ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) থেকে দূরে রাখবে।
লেবু পানি আমাদের ত্বক সুস্থ ও তরুণ রাখে। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস লেবু পানিতে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। ২০১৯ সালে করা একটি সমীক্ষা বলছে, লেবু পানি পলিফেনল সমৃদ্ধ পানীয় যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া অন্ত্রে বয়স-সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলোকে বিলম্বিত করে।
৬। মশলার চা
মরিচ, জিরা, মধু, তুলসি, আদা প্রভৃতি মসলা সহ এক কাপ চা শীতে শরীরকে উষ্ণ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। স্বাদ এবং পুষ্টিগুণকে কয়েক ধাপ বাড়িয়ে নিতে সামান্য পরিমাণে মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।
সবশেষে, সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। এই শীতে তাই কুসুম গরম পানি পান করার মাধ্যমে আপনার দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।