আর্কাইভ  সোমবার ● ৬ অক্টোবর ২০২৫ ● ২১ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ৬ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে ঐকমত্য: আলী রীয়াজ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে ঐকমত্য: আলী রীয়াজ

বিএনপির সঙ্গে গোয়েন লুইসের বৈঠক, নির্বাচন-রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা

বিএনপির সঙ্গে গোয়েন লুইসের বৈঠক, নির্বাচন-রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে ৩০ লাখ টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি শুরু

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে ৩০ লাখ টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি শুরু

দিনাজপুরে স্ত্রী ও শাশুড়িকে কুপিয়ে জখম করে নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

দিনাজপুরে স্ত্রী ও শাশুড়িকে কুপিয়ে জখম করে নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

রংপুরে নজিরবিহীন তাণ্ডব; ১১ মামলা

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, রাত ০৮:২৪

Advertisement

স্টাফ রিপোর্টার: কোটাবিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে রংপুর নগরীতে নজিরবিহীন তাণ্ডব ঘটেছে। এতে দুটি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা, তিন পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয়, পুলিশ লাইন্স, ফাঁড়ি, আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ ১০টি সরকারি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় বুধবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত ১১টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় ৫০০ জনের নাম ছাড়াও অজ্ঞাত আসামি করেছে পাঁচ হাজার জনকে। বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছেন ৯৫ জন।

রংপুর নগরীতে শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকেই ছিল না কোনো উত্তাপ। ওইদিন সরকারি ছুটি থাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সুনশান ছিল পুরো নগর। আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) তাণ্ডবের ক্ষতচিহ্ন রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নজর কাড়ে সাধারণ মানুষের। এরই মধ্যে শুক্রবার জুমার নামাজের পর শান্ত রংপুর ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর জিলা স্কুল মোড়, সিটি পার্ক মার্কেট চত্বর, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন গ্র্যান্ড হোটল মোড়, শাপলা চত্বর, পুরাতন ট্রাক স্ট্যান্ড, কলেজ রোড চারতলার মোড়, লালবাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়, মডার্ন মোড়, দর্শনা মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা ও ধাপ চেকপোস্ট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়। কোথাও কোথাও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়।

এসব মিছিলে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী, সমর্থকরা ছাড়ও দুর্বৃত্তরা অংশ নেয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সাইনবোর্ডে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সমবায় মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ঢাকা ব্যাংকের বুথে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় নগরীর আকাশ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে আগুন দেয় হামলাকারীরা। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের তাণ্ডবে বাদ পড়েনি সদর হাসপাতাল সংলগ্ন পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়। মা ও শিশুদের জন্য নির্মিত এই সরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেন তারা।

শুক্রবার বিকেলের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিছিলে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর থেকে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয় রাজপথ। এ সময় দেশীয় অস্ত্র ছাড়াও লাঠিসোঁটা দিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় বিক্ষোভকারীরা। তাদের সরকারবিরোধী স্লোগান আর থেমে থেমে ছোড়া ইটপাটকেল ও ভাঙচুরের তাণ্ডবে ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয় পুরো নগরজুড়ে। এই সহিংস পরিস্থিতিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করার পাশাপাশি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অর্ধশতাধিকেরও বেশি আহত হন। মিলন, সাজ্জাদ ও মিরাজ নামে তিনজনের মৃত্যু হয়। 

এদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মহানগর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় বুধবার ভোরে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিনাত হোসেন লাভলু।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান বলেন, বিভাগীয় নগরী রংপুরে বিগত কয়েকদিন পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-বিএনপির সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা রংপুর নগরীর তাজহাট থানা, ডিসি ডিবি, ডিসি ক্রাইম, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করাসহ ১০টি সরকারি অফিসে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। সরকারি বেসরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এসব তাণ্ডবের বিভিন্ন অডিও ভিডিও সংগ্রহ করে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তারা সরাসরি নাশকতায় জড়িত ছিল।

 পুলিশ কমিশনার আরো বলেন , সিসিটিভির ফুটেজসহ বিভিন্নভাবে পাওয়া ভিডিও অডিও পরীক্ষা করে তাণ্ডবের হোতা, মদদদাতা, অর্থ সরবরাহকারীসহ সরাসরি তাণ্ডবে অংশ নেওয়া ৫০০ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ৯৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তাণ্ডবে অংশ নেওয়া অনেকেই রয়েছেন।

মন্তব্য করুন


Link copied