নিউজ ডেস্ক: মাদক সেবন করে নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকাই চলচ্চিত্রের চিত্রনায়িকা পরীমণিসহ দুইজনের বিরুদ্ধে এবার মামলা করলেন তার বাসার সেই গৃহকর্মী পিংকি আক্তার। পরীমণি ছাড়া মামলার আরেক আসামি হলেন একই ফ্ল্যাটে বসবাস করা সৌরভ (২৮)
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) পরীমণিকে প্রধান আসামি করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী গৃহকর্মী পিংকি আক্তার। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ৮ মের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসিদুস জামান নিশান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, মামলার বাদী ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার (২৪) নেত্রকোনা জেলা সদরের মৌগাতী ইউনিয়নের ফাদুলিয়া গ্রামের মো. মোজাম্মেলের মেয়ে। গত ৪ এপ্রিল ভাটারা থানায় গিয়ে পিংকি অভিযোগ করেন, বাচ্চা পড়ে যাওয়ায় পরীমণি তাকে মারধর করেছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে সেদিন ভাটারা থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম বলেছিলেন।
এদিকে, ওইদিন মধ্যরাতে ফেসবুক লাইভে এসে পরীমণি তার বিরুদ্ধে ওঠা গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেন। হাতে ‘প্রমাণ থাকায়’ সমস্ত অভিযোগ আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করার কথাও বলেছিলেন অভিনেত্রী। সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ’ পরীমণি সংবাদমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ বন্ধের তাগিদ দেন।
মঙ্গলবার আদালতে করা মামলায় পিংকি আক্তার অভিযোগ করেছেন, ২০২৪ সালের মার্চে মামলার বাদী পিংকি আসামীদ্বয়ের বাসায় কাদের এজেন্সি নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহপরিচারিকার কাজের জন্য চাকরি গ্রহণ নেন। একটি বাচ্চাকে দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে এজেন্সি হতে বাদীকে আসামিদের বাসায় নিয়োগ দেয়া হলেও তাকে দুটি বাচ্চার দায়িত্ব পালন করতে হতো।
এছাড়াও বাদীকে দিনে ও রাতে উভয় সময় বাসার রান্নার কাজ করতে হতো। তবুও বাদীর চাকরি একান্ত আবশ্যক হওয়ায় তিনি মুখ বুঝে সহ্য করে আন্তরিকতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে চলতি বছরের ২ এপ্রিল দুপুর ১টায় আসামি পরীমণি তার মেকআপ রুম থেকে মাদক গ্রহণ করে বাচ্চার রুমে এসে বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। বাদী গালিগালাজ কেন করছেন জানতে চাইলে পরীমণি বলেন, ‘তুই আমার বাচ্চার জন্য দুধ কেন তৈরি করছিস, এখন ওকে সলিড খাবার দিবি।’ বাদী বলে, ‘বাচ্চার খাওয়ার রুটিন অনুসারে এখন দুধ খাওয়ানোর কথা, তাই আমি দুধ তৈরি করেছি।’
এসময় পরীমণি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীর মাথায়, মুখে ও চোখে এলোপাতাড়িভাবে চড়-থাপ্পড় মেরে আহত করে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী বাদী পিংকি পরীমণির মারধরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর বাদী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য ভুক্তভোগী পিংকি তাকে হাসপাতালে নেওয়া জন্য পরীমণিকে অনুরোধ করতে থাকেন। ঘটনার সময় ২নং আসামি সৌরভ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আসামিরা বাদীর কোনো কথা শোনেন নাই। উপরন্তু আসামি সৌরভ পিংকিকে নির্যাতন করার জন্য পরীমণিকে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং বাদীকে বাসার বাইরে যাওয়া থেকে বিরত করেন।
পরে ভুক্তভোগী পিংকি ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে যান। পরে ভুক্তভোগী পিংকি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার গত ৪ এপ্রিল ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৫০৬/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।