নিউজ ডেস্ক: সেই অঙ্কগুলো এখন পাঠ্যসূচিতে আছে কিনা, জানা নেই। তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্ক– বানরটি প্রথম মিনিটে তিন মিটার উঠিয়া, দ্বিতীয় মিনিটে ২ মিটার নামিয়া যায়। বাঁশটির উচ্চতা ৫০ মিটার হলে বানরটির বাঁশের আগায় চড়িতে কত সময় লাগিবে? ছেলেবেলার করা সেই জটিল অঙ্কের মতো অবস্থা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারার পর আইসিসির সহযোগী দেশ আরব আমিরাতের কাছে বিধ্বস্ত টি২০ সিরিজে। এই বাংলাদেশ দলের শীর্ষে পৌঁছতে কত সময় লাগিবে?
বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম অবশ্য আশাবাদী। ‘আরব আমিরাতের কথাই যদি বলেন, তারা যে দুর্বল দল তা নয়। আমাদের জেতা উচিত ছিল। কিন্তু এটা একটা প্রক্রিয়া। অনেক সময় দুই পা সামনে এগোনোর সময় এক পা পেছাতে হয়। কিছু একটা হলেও আমাদের মনোযোগ ঠিক জায়গায় নিয়ে আসবে।’ দ্বিতীয় ম্যাচটি হারার পর অঙ্ক স্যারের মতোই মনে হচ্ছিল নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে। আর তৃতীয় ম্যাচটি হারার পর অধিনায়ক লিটন দাস তো রীতিমতো দার্শনিক। ‘আমরা যখন এখানে এসেছি, সব সময় জিততেই চেয়েছি। তার পরও এটা (পরাজয়) জীবনেরই অংশ। ক্রিকেটে কখনও কখনও প্রতিপক্ষকেও কৃতিত্ব দিতে হয়।’
যেভাবে নিজেদের মাঠে র্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বর দল ৯ নম্বরে থাকা দলটিকে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে– তিন বিভাগেই নাস্তানাবুদ করেছে, তাতে কৃতিত্ব অবশ্যই প্রাপ্য আমিরাতের হয়ে খেলা মৌসুমি ক্রিকেটারদের। সেই সঙ্গে যে দলের খেলোয়াড়রা সারাবছর দেশি-বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ফেরি করে বেরায় তাদের দুয়ো শোনাটাও অনাকাঙ্ক্ষিত নয়।
যে দল এ বছরে সব ফরম্যাট মিলিয়ে সাত ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে জিতেছে, তাদের সমস্যাটা বোধ হয় শুধুই ‘জীবনের অংশ’ বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। টেস্টে জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির সামনে বাংলাদেশি ব্যাটারদের অস্বস্তি থেকে শুরু করে টি২০তে আমিরাতের স্পিনার হায়দার আলির কাছে অসহায়ত্ব।
সবকিছুতেই ক্রিকেটীয় মানের ব্যাপারটি সামনে চলে আসে। সেই সঙ্গে আমিরাতের ব্যাটারদের সামনে বাংলাদেশি বোলারদের সামর্থ্যের ঘাটতিও স্পষ্ট করে। তাই ক্রিকেটীয় মানে অন্যদের চেয়ে বাংলাদেশ যে পিছিয়ে যাচ্ছে, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অন্যরা যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে যেন পাল্লা দিতে পারছে না বাংলাদেশ দল। আমিরাত সিরিজের কথাই যদি ধরা হয়, এখানে স্বাগতিকরা বাংলাদেশ দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারকে গত কয়েক মাস ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করে গেছেন আমিরাতের ক্রিকেটাররা।
নিজেদের কন্ডিশনে সন্ধ্যার পর শিশির পড়ে, এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে পানিতে বল ভিজিয়ে অনুশীলন করেছেন হায়দার আলিরা। সেখানে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ছিল শুধুই পাকিস্তান সফর ঘিরে। সেখানে আমিরাত দলটিকে হয়তো ‘আমরাই তো জিতব’ ধরে গা-ছাড়া দিয়েছে। তাদের এই অতি আত্মবিশ্বাসের কারণেই আমিরাতের ওয়াসিম, জোহায়িব, শারাফুদের সেভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি, যা সিরিজের তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশি বোলারদের বোলিংয়েই প্রমাণিত।
এর বাইরে রয়েছে গা-ছাড়া ফিল্ডিং। টি২০ ক্রিকেটের আগ্রাসী মনোভাব থাকলেও প্রতিপক্ষ নিয়ে কৌশলী দেখা যায়নি লিটনদের। যে দায় কোচ ফিল সিমন্সও এড়াতে পারেন না। তবে প্রিয় দলে এই হাল দেখে সমর্থকরা যতটা ব্যথিত, ততটা বিব্রত বোধ হয় ড্রেসিংরুমের সদস্যরা নন। সেদিন সিরিজ হারার পর শারজাহর গ্যালারি থেকে এক প্রবাসী দর্শক দুয়ো দিচ্ছিলেন, যা মেনে নিতে না পেরে তাঁর দিকে তেড়ে আসাতে থাকেন শামীম হোসেন। পাশে থাকা তানজিম সাকিব অবশেষে তাঁকে নিবৃত করে ফিরিয়ে নিয়ে যান।
গতকাল দুবাইয়ে সারাটা দিন বিশ্রামেই থাকে বাংলাদেশ দল। দলের প্রত্যেকের মধ্যে ওই ‘বানর আর তৈলাক্ত বাঁশের’ মতো মানসিক অবস্থা। তারা বিশ্বাস করে আমিরাত সিরিজের খবর চাপা পড়ে যাবে পাকিস্তান সফরের শুরুতেই একটি ম্যাচ জিতলে। ক্ষণ গুনছেন তারা আগামী বুধবার লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে মাঠে নামার।
লিটন বলছেন, আমিরাত সিরিজের হার থেকে তাদের আরও শিখতে হবে। যে কথা তার আগেও বহু অধিনায়ক বলে গেছেন, যা কেবলই কথার কথাই থেকে গেছে। গত বছর এই সময়েই ডালাসে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টি২০ সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ দল। সহযোগী দেশের কাছে ধাক্কা খাওয়ার পর এমন ‘শিক্ষণীয়’ ব্যাপার খুঁজে পেয়েছিলেন তখনকার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এক পা এগিয়ে দুই পা পেছানোর সেই শিক্ষা এখনও চলমান।