আর্কাইভ  সোমবার ● ৬ অক্টোবর ২০২৫ ● ২১ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ৬ অক্টোবর ২০২৫
ছাত্রদলে যোগ দিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী

ছাত্রদলে যোগ দিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী

রংপুরের দুইটি ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ

রংপুরের দুইটি ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ

নাটোরে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

নাটোরে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

ডাকসু বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান

ডাকসু বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান

শেখ হাসিনার বিচার কবে শুরু, কবে শেষ?

শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, সকাল ০৯:৫৩

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন টিম। জুলাই – অগাস্টের আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় এখন আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোন মামলায় বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

মামলাটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও দুজন অভিযুক্ত রয়েছেন। তারা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, "আমরা আশা করছি, সামনে যে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে, তার আগেই আমরা ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ জমা দিতে সক্ষম হবো। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট – ১৯৭৩ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় " বলেন মি. তামীম।

ফলে ঈদের আগেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইয়ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে বলে জানান এই প্রসিকিউটর।

তদন্ত শেষ করে গত ১২ই মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলার বিচার কবে শেষ হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন মি. তামীম।

যদিও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার কবে শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচার শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা।

যেভাবে চলবে বিচার প্রক্রিয়া
জুলাইয়ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার জমা দেওয়া পাঁচটি অভিযোগই চূড়ান্ত করেছে প্রসিকিউশন।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুমানিক ৫০ জন সাক্ষী দিতে পারেন। প্রসিকিউটর মি. তামীম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলাটিতে শেখ হাসিনাকে জুলাই – অগাস্ট আন্দোলনের "মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার" হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সপ্তাহ দেড়েক আগে এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, জুলাইয়ে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের 'উস্কানিদাতা' হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্ররোচনা, উস্কানি দেওয়া, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার অভিযোগও আনা হয়েছে। তবে প্রসিকিউশন পক্ষ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার পর ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী আইনী ধাপে অগ্রসর হবে।

প্রসিকিউটর মি. তামীম জানান, যেহেতু এ মামলার দুজন অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক, তাই এখন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেওয়া হবে।

মামলায় আরেক অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতার রয়েছেন।

 মি. তামীম বলেন, "প্রথমে অভিযুক্তদের যারা পলাতক তাদেরকে ট্রাইব্যুনালের হাজির করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত দুটি জাতীয় পত্রিকায় তাদের হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হবে।"

এরপর তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তাদের পলাতক ঘোষণা করা হবে।

এ পর্যায়ে পলাতকদের প্রত্যেকের পক্ষে রাষ্ট্র একজন আইনজীবী নিয়োগ করবে। যিনি স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল হিসেবে পরিচিত হবেন।

মি. তামীম বলেন, "এরপরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে। অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য ও জেরা, যুক্তি-তর্ক এরপর রায় ঘোষণা করা হয়।"

আইনানুযায়ী এখন এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল সাক্ষ্য – প্রমাণ দেওয়া যাবে।

সে কারণে প্রসিকিউশন অডিও রেকর্ড এবং ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করবে বলে জানান মি. তামীম।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মি. তামীম জানান, প্রথম অভিযোগের স্বপক্ষে ডিজিটাল সাক্ষ্য – প্রমাণ হিসেবে গত ১৪ই জুলাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা যে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের 'রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতি' বলেছিলেন সেই ভিডিও উপস্থাপন করা হবে ট্রাইব্যুনালে।

এর আগে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার এভাবে রাজাকার বলার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে 'লেলিয়ে দেওয়া' হয়েছিল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বিতীয় অভিযোগে 'সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার' অভিযোগও রয়েছে শেখ হাসিনাসহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুলি করে আহত করা, অঙ্গহানি করার ক্ষেত্রে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

প্রসিকিউটররা জানান, এসব নির্দেশের 'টেলিফোনিক কনভারসেশন' ডিজিটাল সাক্ষ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।

প্রসিকিউটর মি. তামীম জানান, " শেখ হাসিনার কথোপকথনের দুইটি অডিও রেকর্ড এবং জুলাই - অগাস্টে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনাগুলোর ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।"

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৫ টি মামলা রয়েছে।

এর মধ্যে আগামী সপ্তাহে এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে। এর আগে একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

বাকি ২৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর মি. তামীম। খবর: বিবিসি বাংলা

মন্তব্য করুন


Link copied